সাতক্ষীরার হিমসাগর, ল্যাংড়া ও গোবিন্দভোগ আমের সুখ্যাতি রয়েছে সারা দেশব্যাপি। দেশের গোন্ডি পেরিয়ে সাতক্ষীরার আম রপ্তানি করা হয় ইউরোপসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। আমের এই সুখ্যাতি ধরে রাখতে এখনো আম সংগ্রহের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেনি জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু অধিক মুনাফা লাভের আশায় একটি অসাধু ব্যবসায়ি চক্র অপরিপক্ক গোবিন্দভোগ আম পেড়ে কেমিক্যাল মিশিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করছে। গত ছয়দিনে জেলার কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৭ হাজার ৪০০ কেজি আম জব্দ করে বিনিষ্ট করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
অপরিপক্ক আম পাড়া বন্দ করতে গত ২৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাতক্ষীরা জেলায় এ বছর আমের মুকুল দেরীতে এসেছে। এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও গোবিন্দভোগ, হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম পরিপক্ক অবস্থায় উপনীত হয়নি। জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সভা করে আম সংগ্রহের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করবে। সে মোতাবেক গাছ থেকে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করতে হবে। অসদুপায় অবলম্বনে পাকানো অপরিপক্ক আম খাদ্য হিসেবে গ্রহণে ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অসদুপায় উপায় অবলম্বনে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি জারি করা ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি স্বত্বেও থেমে নেই অপরিপক্ক গোবিন্দভোগ আম পেড়ে কেমিক্যাল মিশিয়ে বাজারজাত করার অপচেষ্টা। অতিরিক্ত মুনাফার লাভের আশায় একটি অসাধু ব্যবসায়ি চক্র নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অপরিপক্ক আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করার তৎপরতা লিপ্ত রয়েছে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিকে পাকানো হচ্ছে এসব আম। জনস্বার্থে অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। গত ২৭ এপ্রিল সোমবার হতে ২ মে বৃহস্পতিবার ছয়দিনে পৃথক অভিযানে জেলার কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৭ হাজার ৪০০ কেজি বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো অপরিপক্ক গোবিন্দভোগ আম জব্দ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জব্দকৃত এসব আম জনসম্মুখে ধ্বংস করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২ মে বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ শহরের বাইপাস সড়কে অভিযান চালিয়ে ক্ষতিকর রাসয়নিক দিয়ে পাকানো ট্রাক ভর্তি মেট্রিক মেপ্রিক টন অপরিপক্ক গোবিন্দভোগ আম জব্দ করে। পরে বিকালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে এস এম আকাশের নেতৃত্বে শহরের সুলতানপুর পি.এন স্কুল মাঠে গাড়ির চাকায় পিষ্ট করে এসব আম বিনষ্ট করা হয়।
একই দিনে (২মে) দেবহাটা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) দীপা রানী সরকার উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের বহেরা এলাকা থেকে এবং ১ মে বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান উপজেলার সখিপুর এলাকায় পৃথক অভিযানে ১০ হাজার কেজি রাসায়নিক মিশিয়ে পাকানো গোবিন্দভোগ জাতের আম জব্দ করেন। পরে জব্দকৃত আম সখিপুর ফুটবল মাঠে প্রকাশ্যে গাড়ির চাকায় পিষে বিনষ্ট করা হয়।
এদিকে ৩০ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আজাহার আলী উপজেলার কালীবাড়ি বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রায় ৯ হাজার কেজি গোবিন্দভোগ আম জব্দ করেন। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরুর পূর্বে মালিকপক্ষ পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ১মে (বুধবার) ভোর রাতে পৃথক অভিযানে কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা এলাকা থেকে কেমিক্যালে পাকানো ৩০০০কেজি অপরিপক্ক আম জব্দ করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশের উপস্থিতিতে সেগুলো বুধবার (১ মে) সকালে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে জনসম্মুখে গাড়ির চাকায় পিষ্ট করে ধ্বংস করা হয়।
অপরদিকে গত ২৯ এপ্রিল (সোমবার) বিকাল ৫টার দিকে দেবহাটা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অতীশ সরকার সদর উপজেলার আলিপুর চেকপোস্ট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যে পাকানো ৬ মেট্রিক টন গোবিন্দভোগ আম জব্দ করেন। পরে সেগুলো গাড়ির চাকায় পিষে বিনষ্ট করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে কেমিক্যালে পাকানো ৪০০ কেজি অপরিপক্ক আম ধ্বংস করা হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে এস এম আকাশ জানান, সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া সহ নানা প্রজাতির সুস্বাদু আম সারাদেশে এ জেলার পরিচিতি, সুনাম ও ঐতিহ্যকে বহন করে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লাভের আশায় অপরিপক্ক আম রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে সারাদেশে সরবরাহের মধ্যদিয়ে ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করছেন। এতে একদিকে দেশজুড়ে সাতক্ষীরার আমের সুনাম যেমন নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে রাসায়নিক মেশানো আম খাওয়ার ফলে মানুষের ব্যপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আম পরিপক্ক হওয়ার নির্ধারিত সময়ের আগে যাতে রাসায়নিক মেশানো সাতক্ষীরার আম কোনভাবেই দেশের বাজারে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের এ অভিযান অব্যহত থাকবে।
খুলনা গেজেট/এনএম