আর মাত্র ৬দিন পর উদযাপিত হবে মুসলামানদের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল আযহা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এদিন নিজের পছেন্দের পশু কোরবানী করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এবার জেলায় চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ১৫ হাজার ২৮৮টি কোরবানীর পশু মজুদ রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় পশুর যোগান বেশি থাকায় কাঙ্খিত আয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন জেলার খামারীরা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবারে কোরবানীর জন্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ হাজার ৩১৮টি। চাহিদার বিপরীতে পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৬০৬টি। সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ থাকায় এবার কোরবানীর ঈদে দেশীয় গরুর বেশ চাহিদা রয়েছে। ফলে বাজারে পশুখাদ্য এবং পশু পরিচর্যা ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় আশানুরূপ দাম পাওয়ার ব্যাপারে খুব বেশি আশাবাদী না খামারীরা।
এদিকে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে কাঙ্খিত দাম পাওয়ার আশায় শেষ মুহূর্তে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার খামারীরা। গমের ভূষি, ভুট্টা, পালিশ, সয়াবিন খৈল এবং নিজেদের চাষ করা ঘাসসহ অর্গানিক খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। ইতিমধ্যে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। এবার বড় গরুর তুলনায় ছোট গরুর চাহিদা বেশী। তবে, জেলায় চাহিদার তুলনায় পশুর যোগান বেশি থাকায় কাঙ্খিত আয় নিয়ে শঙ্কা রয়েছে অনেকের মনে।
খামারীরা জানান, গত বছর খাবারের মূল্য কম থাকায় আমরা লাভবান হয়েছিলাম। এবার খাবারের দাম বেশি। তবে, ভারত থেকে গরু না এলে এবারও লাভবান হতে পারবেন বলে আশাবাদী খামারীরা।
দেবহাটার একটি গরুর খামারের মালিক আল ফেরদৌস আলফা জানান, তার খামারে ছোট বড় মিলে মোট ৬৭ টি গরু ছিল। ইতিমধ্যে তার খামারের ১৫টি দেশী জাতের ছোট ‘গরু বিক্রি হয়ে গেছে। দুই মনের উপরের ওজনের গরু ৪৮০ টাকা কেজি ও তার নিচের ওজনের গরু ৫০০ টাকা কজি দরে বিক্রি করছেন। তবে বড় গরুর তুলনায় এবার ছোট গরুর চাহিদা বেশি।
তিনি আরও বলেন, যে সব গরুর দাম এক লাখ থেকে এক লাখ ৪০ হাজারের মধ্যে রয়েছে সেগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। আবার গরুর দাম ২ লাখ পার হলে সেগুলো বিক্রি কম হচ্ছে। এবার বড় গরুর ক্রেতা তেমন নেই বললে চলে। বাজারে পশুখাদ্য এবং পশু পরিচর্যা ব্যয় গত বছরের তুলনায় এবার বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই বিক্রি কম থাকায় এবার দাম কেমন পাওয়া যাবে এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না।
খামারী হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, খাবারের দাম বেশি, গরুর দাম কম। লাখের উপরে গরু বিক্রি নেই। খামার চালানো কঠিন। গত বছর লাভ হয়েছিল বলেই এবছর গরু প্রস্তুত করা। জানতে পারলাম এবছর জেলায় চাহিদার তুলানায় কোরবানীর পশু বেশি রয়েছে। ফলে এ বছর কি হবে বলা যাচ্ছে না। এখনো পর্যন্ত তার খামারের একটিও গরু বিক্রি হয়নি। ফলে এবছর পশুর আশানারূপ দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
কয়েকজন ক্রেতা জানান, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবার দাম কম হবে প্রত্যাশা ছিল। তবে ক্রেতাদের কেউ বলছেন গত বছরের চেয়ে এবার দাম একটু বেশি, আবার কেউ বলছেন তুলনামূলকভাবে কম। তবে কোরবানীর পশুর সরবরাহ রয়েছে বেশ ভাল। এজন্য পশু কিনতে আরো বেশ কিছুদিন দেরি করতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ডা. বিষ্ণুপদ বিশ্বাস বলেন, এ বছর জেলায় খামারীর সংখ্যা ১২ হাজার ৮৯৪। এসব খামারে ৪৯ হাজার ১৯৯টি গরু, ১ হাজার ১৮২টি মহিষ, ৪৪ হাজার ৫৪টি ছাগল, ৬ হাজার ১৫৬টি ভেড়া এবং অন্যান্য ১০টিসহ ১ লাখ ৬০৬টি পশু প্রস্তুত রয়েছে।
এ বছর জেলায় কোরবানী হতে পারে ৪২ হাজার ৩৫২টি গরু, ৬১৬টি মহিষ, ৩৮ হাজার ৮৫০টি ছাগল এবং ৩ হাজার ৫০০টি ভেড়াসহ মোট ৮৫ হাজার ৩১৮টি। সেই হিসাবে ১৫হাজার ২৮৮টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ২ থেকে ৩% কোরবানীর পশু বেড়েছে। কাজেই কোন সংকটের আশঙ্কা নেই।
তিনি আরও বলেন, এবার সীমান্ত পেরিয়ে কোন গরু আসবে না। এক্ষেত্রে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। তারপরও চোরাই পথে কিছু ঢুকলেও প্রান্তিক চাষিদের তেমন কোন সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম