খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

সাতক্ষীরায় গৃহবধূ ও যুবককে নির্যাতন : থানায় মামলা, স্বামীসহ আটক তিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথী নামের এক গৃহবধূ ও তার প্রেমিককে পিটিয়ে ও শরীরে গরম তেল ঢেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর বাবা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের মোঃ নওশের আলী সরদারের ছেলে মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে সদর থানায় এই মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর ও ননদকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান (ঋষিপাড়া) এলাকার মোঃ আব্দুল বারীর ছেলে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী মোঃ নয়ন হাসান রাব্বি (২৪), শ্বশুর মৃত নলিম শেখ এর ছেলে মোঃ আব্দুল বারী (৫২) ও ননদ আশাশুনি উপজেলার চেউটিয়া গ্রামের মোঃ আজমল হোসাইনের স্ত্রী নাসরিন সুলতানা সুমি (২৭)।

এ মামলার বাদী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, আমার মেয়ে রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথী আশাশুনি গুনারাকাঠি মাদ্রাসায় আলিম ২য় বর্ষে লেখাপড়া করে। একই মাদ্রসায় লেখাপড়ার সুবাদে কচুয়া গ্রামের আবু হানিফ সরদারের ছেলে মোঃ হাবিবুল্লাহ আমার মেয়ের বন্ধু। সেই হিসেবে তাদের মধ্যে মোবাইলে কথা হত। শনিবার বেলা সোয়া ১০ টার দিকে আমার মেয়ের বন্ধু আব্দুল্লাহ লেখাপড়ার বিষয়ে মেয়ের সাথে কথা বলতে জামাইয়ের বাড়ীতে যায়। পরে সাথীর শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদের দু’জনকে আটক করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। এ সময় মেয়ের সর্বাঙ্গে গরম তেল ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

মামালার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সরকার জানান, গৃহবধূ রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথীসহ তার বন্ধু মাদ্রাসা ছাত্র আব্দুল্লাহকে নির্যাতনের ঘটনায় শনিবার রাতে সাতক্ষীরা সদর থানায় ৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর বাবা মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে রাতে এই মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী মোঃ নয়ন হাসান রাব্বি, শ্বশুর মোঃ আব্দুল বারী ও ননদ নাসরিন সুলতানা সুমিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথী ও হাবিবুল্লাহকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগে রাব্বি ও তার বাবা আব্দুল বারী এবং রাব্বীর বোন সুমিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গতঃ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের মেয়ে স্থানীয় গুনাকারকাটি দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথীর সাথে প্রায় তিন বছর আগে সাতক্ষীরা শহরের রাজারাবাগান (ঋষিপাড়া) এরাকার আব্দুল বারীর ছেলে নয়ন হাসান রাব্বির বিয়ে হয়। দুই মাস আগে একটি মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা ও তার সম্পর্কে অনৈতিক সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় রাব্বি তার স্ত্রী রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথীকে মারপিট করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। কিছুদিন পর রাব্বি তাদের বাড়িতে যেয়ে ক্ষমা চেয়ে সাথীকে নিয়ে আসতে চায়। কিন্তু সাথী যেতে রাজী না হওয়ায় রাব্বি মাঝে মাঝে তাদের বাড়িতে যেত। একপর্যায়ে ১০দিন আগে রাব্বি তার স্ত্রী সাথীকে নিয়ে বাড়িতে আসে। পূর্বের ঘটনার জের ধরে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাব্বি, তার বাবা আব্দুল বারিসহ কয়েকজন বারান্দায় বসে থাকা সাথী ও তার সাথে দেখা করতে যাওয়া তার (সাথী) বন্ধু একই মাদ্রাসার ছাত্র মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ (২০) কে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া ও দুই চোখের ভ্রুর চুল কেটে দেয়। পরে তার সর্বাঙ্গে গরম তেল ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত সাথী ও হাবিবুল্লাহর উপর এ নির্যাতন চালানো হয়। হাবিবুল্লাহ আশাশুনি উপজেলার কচুয়া গ্রামের আব্দুল হানিফের ছেলে। হাবিবুল্লার মাথায় ও পায়ে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়।

এ ঘটনার খবর পেয়ে সদর থানার উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সরকার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সাথী ও হাবিবুল্লাহকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সাথীকে শনিবার সন্ধ্যায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার রাতেই দগ্ধ গৃহবধূ সাথীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আহত আব্দুল্লাহ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!