খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

সাতক্ষীরায় কাঁচা মরিচের ঝাল কমলেও বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় কাঁচা মরিচের ঝাল কমলেও বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। মাত্র চারদিনের ব্যবধানে সাতক্ষীরার বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা ও ভারতীয় আমদানিকৃত এলসির পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। মসলা জাতীয় এই নিত্যপণ্যটির হঠাৎ করে দাম বাড়ায় ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। বাজারে নিত্যপণ্যের দামের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। সরবরাহ কমে যাওয়ায় হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়িদের।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি দোকানে গিয়ে দেখা গেছে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪২ টাকা। ভারতীয় আমদানিকৃত এলসির পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি। এসময় ভারতীয় আমদানিকৃত এলসির পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে এই পণ্যটি আরো ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ২৮০ টাকা কেজি দরের ভারতীয় এলসির কাঁচা মরিচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। আর দেশি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। যা কয়েকদিন আগে ছিল ২৫০ টাকা ও ২৮০ টাক কেজি। ক্রেতারা কাঁচা মরিচ কিনতে পারলেও চমকে উঠছেন পেঁয়াজের বাজারে গিয়ে।

সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজারে আসা ক্রেতা শহরের নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা রফিকুল আলম বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে পণ্যের দামের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। চরদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আমাদের মত সাধারণ ক্রেতাদের এত দামে পেঁয়াজ কিনে খাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আর কয়েকদিন পরে হয়তো ২০০ টাকা কেজি দরে কিনতে হতে পারে।

বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা পলাশপোল এলাকার সিরাজুল ইসলাম জানান, মাত্র ৪/৫ দিনের ব্যবধানে বাজারে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ১৪০ টাকা কেজি। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহে ছিল ৯০ টাকা। আজ এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ১১০ টাকা। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মত লোকের সংসার চালনো কঠিন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা বিক্রেতা নিউ ফাতেমা ষ্টোরের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন সকালে পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে কেজিতে ৫-৭ টাকা লাভে বিক্রি করি। এক বস্তা পেঁয়াজ কিনলে অনেক পেঁয়াজ বাদ যায়। এতে করে আমাদের লাভ তেমন হয়না। তবু খরিদ্দার ধরে রাখার জন্য সবধরণের পণ্য দোকনে রাখতে হয়। গত ৪/৫ দিনের ব্যবধানের দেশী পেঁয়াজ কেজি প্রায় ২৫-৩০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। যে কোন পণ্যের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেলে বিক্রির সময় অনেক ক্রেতার কথা শুনতে হয় আমাদের।

সুলতানপুর বড়বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ি আব্দুল আজিজ জানান, স্থানীয় জাতের পেঁয়াজ আজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪২ টাকা, যা ৪/৫ দিন আগেও ছিল ১১০-১১৫ টাকা কেজি। বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজের চেয়ে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা একটু বেশি। চাহিদা অনুযায়ি সরবরাহ কম থাকায় দেশী পেঁয়াজের দাম একটু বেশি বেড়েছে। একই সাথে বেড়েছে ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। আজ এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি। সরবরাহ বেড়ে গেলে আবার দাম কমে যাবে বলে জানান তিনি।

ভোমরার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুমন এন্টারপ্রাইজের মালিক সভাষ ঘোষ বলেন, কয়েকদিন আগেও ভারত থেকে প্রায় ৭০ গাড়ি পেঁয়াজ আসতো। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ গাড়ি করে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। আমদানি কমে যাওয়ায় ভোমরা বন্দরে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা কেজি। এক বস্তা পেঁয়াজে অনেক সময় নষ্ট বের হয়। এছাড়া ক্যারিং খরচ দিয়ে শহরের পৌছাতে দাম একটু বেড়ে যায়। যে কারণে পোর্টের দাম থেকে বাজারের দামে কিছুটা তারতম্য ঘটে। তবে গতবারের তুলনায় এবার আমদানি অনেক কম হচ্ছে।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খান বলেন, আগে যেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০০ গাড়ি পেঁয়াজ আসতো ভারত থেকে। বেশ কয়েকদিন আগেও গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৭০ গাড়ি করে পেঁয়াজ ঢুকতো। এখন সেখানে গড়ে প্রতিদিন ৫০ -৫৫ গাড়ি করে পেঁয়াজ আসছে। গত ২০ অক্টোবর ভোমরা বন্দরে ভারতীয় পেঁয়াজ এসছে ৪৮ গাড়ি, ২১ তারিখে ৪৯ গাড়ি, ২২ তারিখে ৩৯ গাড়ি, ২৩ তারিখে ৪৩ গাড়ি, ২৪ তারিখে ৭১ গাড়ি, ২৭ তারিখে ১০০ গাড়ি এবং ২৮ তারিখে ৬৭ গাড়ি।

তিনি আরো বলেন, ক্যারিং ও ডিউটি সহ ভারত থেকে ব্যবসায়িদের পেঁয়াজ কেনা পড়ছে প্রায় ৯০ টাকা কেজি। বন্যার কারণে ভারতের দক্ষিনের প্রদেশ গুলোতে পেঁয়াজের দাম বেশি। এছাড়া ভারতের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারি এলাকা নাসিকের পেঁয়াজ এখনো উঠা শুরু করেনি। যে কারণে আমদানিকারকদের বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে দামের উপর। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দেশী পেঁয়াজের দাম কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!