খুলনা, বাংলাদেশ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক হাসান মাহমুদ সাকিকে মারধরের ঘটনায় সাবেক শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন নোমানের ছাত্রত্ব ও সনদ সাময়িক স্থগিত

সাতক্ষীরায় আগাম আমে চাহিদা বাড়লেও বাজার সংকটে ভোগান্তি বাড়ছে কৃষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আর মাত্র একদিন পরেই সাতক্ষীরায় শুরু হবে আম বিক্রির মৌসুম। মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়ার কারণে সাতক্ষীরার আম দেশের অন্য এলাকার তুলনায় আগেভাগে পরিপক্ব হয়। ফলে আমের ভাল দাম পান এই অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু জেলায় আম বিক্রির একটি মাত্র বাজার হওয়ায় জায়গা স্বল্পতার কারণে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় চাষী ও ব্যবসায়িদের। সে কারণে শুধু সুলতানপুর বড়বাজার নামের একটি বিক্রিয় কেন্দ্রের উপর নির্ভর না করে আরও বাজার তৈরির দাবি কৃষকদের।

সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি আমের কদর দেশ-বিদেশে। আর এজেলার আম পরিপক্ক হয় সবার আগে। ফলে এসব আম বাজারে আগে উঠায় তুলনামূলক ভালো দাম পান কৃষকরা।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ হাজার আমবাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টনের গুণগত মান ঠিক রাখতে জেলা প্রশাসন আম সংগ্রহ ও বাজারজাতের নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়েছে।

নির্ধারিত সময় অনুযায়ী—গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ ৫ মে, হিমসাগর ২০ মে, ল্যাংড়া ২৭ মে এবং আম্রপালি ৫ জুন থেকে বাজারজাত করা যাবে। ইতোমধ্যে গোবিন্দভোগ আম পাকতে শুরু করেছে এবং আগেভাগেই বাজারে উঠেছে।

এদিকে বাজার ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলার আম চাষী ও ব্যবসায়িরা। তাদের অভিযোগ, সাতক্ষীরায় একটি মাত্র বড় বাজার থাকায় সবাইকেই সেখানেই আম বিক্রি করতে হয়। ফলে জায়গা স্বল্পতার কারণে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় চাষী, পাইকার ও ক্রেতাদের। সুলতানপুর বড়বাজারে রাস্তার জায়গা কম থাকায় আম বিক্রি করতে হয় চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা। তাই আম বাজারে আসার আগে সুলতানপুর বগবাজারের পাশপাশি কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ বাজার সৃষ্টির দাবি জানিযেছেন তারা।

কৃষকদের দাবি, কয়েকটি বাজার চালু হলে এবং খোলা মাঠে ভ্রাম্যমাণ পাইকারি বাজার বসলে ভালো দাম পাওয়া যেত। জেলা প্রশাসনের প্রতি তারা এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ধুলিহর এলাকার আম চাষী মোকলেছুর রহমান জানান, মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়ার কারণে সাতক্ষীরার আম তাড়াতাড়ি পেকে যায় এবং আম খুব সুন্দর সুস্বাদু হয়। আগে পাকায় আমরা সবার আগে বাজারজাত করতে পারি। আগে বাজারজাত করায় দামও ভাল পাই। কিন্তু সুলতানপুর বড়বাজারে জায়গা স্বল্পতার কারণে আমাদের আম বিক্রি করতে খুবই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাজারে দাড়াতে না পেরে অনেক সময় কম দামে বিক্রি করে জায়গা খালি করতে হয়।

আম চাষী আনারুল ইসলাম বলেন, এই সুলতানপুর বড়বাজার মূলত সবজির বাজার। এখানে সবজির সাথে আরও অনেক রকম মালামাল বিক্রি হয়। ফলে এখানে আম বিক্রি করতে এসে আমাদের নানা ঝামেলা পোহাতে হয়, অনেক কষ্ট হয়ে যায়। যদি পাশে কোন খোলামেলা জায়গায় নিয়ে আম বিক্রির সুযোগ থাকতো তাহলের আমাদের জন্য খুব ভাল হতো। আমরা আম বিক্রি করে স্বস্তি পেতাম।

আম ব্যবসায়ি তুহিন হোসেন জানান, সাতক্ষীরার বড়বাজারের পাশপাশি যদি আরও কয়েকটি আম বিক্রির বাজার স্থাপনের যদি সুযোগ করে দেয়া যায় তাহলে চাষীদের সাথে ক্রেতা বিক্রেতারাও সেখানে স্বচ্ছন্দে তাদের আম কেনা বেচা করতে পারবে। তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে খামার বাড়ি সাতক্ষীরার উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরায় আরো বাজার তৈরি করা গেলে কৃষকরা আমের ভাল দাম পাবে। জেলা মাঝখানে একটি উপযুক্ত স্থানে যদি একটি ভাল মানের বাজার করা যায় যেখানে সব উপজেলা থেকে সহজে আসা যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হয় তাহলে কৃষকদের জন্য সুবিধা হবে। সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করলে সাতক্ষীরার আম চাষিরা আমের ভালো দাম পাবে।

কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরার আম দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপ -আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। বাজার বৃদ্ধি ও যুবকদের আম চাষে আগ্রহী করা গেলে জেলায় আম চাষি বাড়বে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে বেকারদের। ফলে চিংড়ির পাশপাশি এই খাত হতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতে পারে বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!