সাতক্ষীরায় অনুমোদনবিহীনভাবে চলছে শতাধিক অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নিয়ম না মেনে অনুমোদন বিহীনভাবে এসকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দীর্ঘ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য সেবার নামে বেশিরভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চলে রুগীদের হয়রানি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর আগে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য থাকতে হয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। শুধু তাই নয়, ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নিতে হয়। ড্রাগ লাইসেন্স, নাইক্রোটিস লাইসেন্স ছাড়াও, প্রতিষ্ঠানের নামে ভ্যাট ও টিন সার্টিফিকেট থাকতে হয়। ক্লিনিক থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করতে হলে অব্যশই পরমাণু রেডিয়েশনের ছাড়পত্র লাগে। সকল নিয়ম অনুযায়ী আবেদন বৈধ হওয়ার পর প্রতি অর্থবছরে নবায়ন করতে হয়। কিন্তু সাতক্ষীরার অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না এসব নিয়ম কানুন।
এছাড়া সরকারি বিধিমালায় নিয়ম আছে-সরকারি সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ গজের ভিতর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা যাবে না। এই নিয়ম না মেনেও সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশেপাশে গড়ে উঠেছে স্বাস্থ্যসেবার নামে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সামনে ও সিভিল সার্জন অফিসের নাকের ডগায় এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক গড়ে উঠলেও দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
এদিকে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সাতক্ষীরা শহরসহ সাত উপজেলায় চলছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো। ফলে অসহায় মানুষের গলা কাটার মহাৎউসব চলছে এসব অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালে। একই সাথে দালালের খপ্পরে পড়ে দিনের পর দিন প্রতারিত হচ্ছে অসহায় মানুষ। আর লাভবান হচ্ছেন কতিপয় দালাল ও অসাধু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা।
এছাড়া সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীরা অনেকাংশে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে জড়িত থাকায় কোন নিয়মকানুন মানা লাগে না এইসব প্রতিষ্ঠানের।
মূলত এই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে একশ্রেণীর দালাল। দালালদের মাধ্যমে ভাগিয়ে আনা হয় রোগী। বিভিন্ন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙানো থাকলেও নিয়মিত রোগী দেখতে বসেন না তারা। ধার করা খন্ডকালীন চিকিৎসক দিয়ে চলছে জটিল অস্ত্রোপচারসহ নানা চিকিৎসা। অনুমোদনহীন এসব হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ব্যবসা, প্রতারণা, রোগী ভোগান্তির অভিযোগ উঠছে হরহামেশাই। এছাড়াও এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় সময়ই ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগও উঠে। জেলা সদরের পাশাপাশি তালা, কলারোয়া, পাটকেলঘাটা, বুধহাটা, কুল্যারমোড়, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানে নেই অ্যাম্বুলেন্স, নেই এনেস্থিয়া ডাক্তার, নেই অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা। এখানে নেই প্রশিক্ষিত নার্স। তবুও চলছে এসব প্রতিষ্ঠান।
ভুক্তভোগী শেখ শরিফুল ইসলাম জানান, এসকল অনুমোদন বিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সেবা দেওয়ার চেয়ে অর্থনৈতিক হয়রানি করে বেশি। এদের মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে চিকিৎসার নামে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। কোন পদক্ষেপ না থাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্লিনিকের সংখ্যা। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত থাকায় পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সাত উপজেলায় ২০৬টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য আছে সিভিল সার্জনের কাছে। এই ২০৬টি ক্লিনিকের তথ্যের বাইরেও শহরের আনাচে কানাচে, হাটে মোড়ে, অলিতে গলিতে চোখে পড়ে শতাধিক অবৈধ ক্লিনিক। চলতি বছর নবায়নের জন্য ১২৫টি ক্লিনিক আবেদন করেছে। ১২৫টির ভিতর ২১টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সকল কাগজপত্র সঠিক আছে। বাকিগুলোর সকল বৈধ কাগজপত্র নেই বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন ডা. আবু সুফিয়ান রুস্তম।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু সুফিয়ান রোস্তম আরও বলেন, অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরও নির্দেশনা পেলে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম