খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়িগেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম একটি এলাকা। মহাসড়কটির রেলক্রস সংলগ্ন পশ্চিম দিকে কুয়েট সংযোগ সড়কে দেশের অন্যতম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এইচএসটিটিআই), খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুলসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলোর প্রবেশদ্বার ফুলবাড়িগেট রেলক্রস সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের এলাকা।
এছাড়া ওই একই স্থানে সড়কের উপর খুলনাগামী সিএনজি, অটোরিক্সা স্ট্যান্ড অবস্থিত। রেল ক্রসিং পার হলে ডান দিকে ফুলবাড়িগেট বাজার এবং বামদিকে মহাসড়কের উপর অটোরিক্সা, সিএনজি এবং দূরপাল্লার পরিবহনগুলোর স্ট্যান্ড রয়েছে। সংগত কারণেই স্থানটিতে দিবারাত্রি যানজট লেগে থাকে। এরপর যানবাহন চালক এবং পথচারীদের ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ ব্যস্ততম সড়কের উপর রেল ক্রসিং।
মহাসড়কের উপর রেল ক্রসিং দিয়ে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘন্টায় ২৮ বার ট্রেন আসা-যাওয়া করে বলে গেটম্যান সূত্রে জানা যায়। প্রতিবার ট্রেন যাতায়াতের সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য সর্বনিম্ন ৩ মিনিট, মালবাহী ট্রেনের জন্য ৪ মিনিট এবং ট্রেনের ইঞ্জিনের জন্য ৩ মিনিট গেট বন্ধ রাখা হয়। ক্ষেত্রবিশেষ উক্ত সময়ের বেশিও গেট বন্ধ রাখতে হয়। প্রতিবার ট্রেন আসা যাওয়ার সময় সড়কের দু’পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পিক আওয়ার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত যানজটে ভোগান্তি বেশি হয়।
এ সময় মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীদের যানজটের কবলে পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া মুমূর্ষু রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জরুরি গাড়িগুলোকেও দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে হয়। অপচয় হয় মূল্যবান সময় ও জ্বালানি তেলের। এছাড়াও মাঝেমধ্যে ওই স্থানে রেললাইনে ত্রুটির কারণেও দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
মহাসড়কের এ স্থানটি দিয়ে দুর্ঘটনা এড়িয়ে ঝামেলামুক্ত ও স্বাচ্ছন্দে যাতায়াতের নিমিত্তে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) সাড়ে চার বছর আগে ওভারপাস নির্মাণের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু সেটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
জানা যায়, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) ২০২১ সালের শুরুতে ফুলবাড়িগেট রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩শ’ কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে সম্ভাব্যতা যাচাই করে জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় এক হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠিত কনসালট্যান্ট ফার্ম দিয়ে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করা হয়। কনসালট্যান্ট ফার্মের বিশেষজ্ঞরাও ফুলবাড়িগেট রেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণের প্রয়োজনীতার স্বপক্ষে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন। রেল ক্রসিং এর উত্তর, দক্ষিণ ও কুয়েট সংযোগ সড়কের আধা কিলোমিটার এবং এক কিলোমিটার সাইড উইংসহ মোট দেড় কিলোমিটার জুড়ে “ওয়াই লুফ” আকৃতির ওভার পাসটি নির্মাণের পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রস্তাবনাটি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রস্তাবনাটি পাঠানো হয়েছে সাড়ে চার বছর আগে ২০২১ সালে। কিন্তু অদ্যবধি আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। ফাইলবন্দি অবস্থায় রয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই সময়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটির সদস্যদের সরেজমিনে প্রকল্পের স্থান পরিদর্শন ও ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়াদি নিয়ে কেডিএ কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে গত সাড়ে চার বছরেও মন্ত্রণালয় থেকে ওই কমিটির সদস্যরা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে খুলনা সফরে আসেননি।
ফুলবাড়িগেট রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)’র নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ত) মোঃ আরমান হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে কমিটির সদস্যরা পরিদর্শনে আসার পর আমরা প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দিলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবো।
তিনি বলেন, প্রথমাবস্থায় প্রকল্পের ব্যয় ৩শ’ কোটি টাকা ধরা হলেও পরবর্তীতে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের ব্যয় আনুমানিক এক হাজার কোটি টাকা ধরা হয়। কিন্তু প্রকল্পটির ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোন সাড়া মেলেনি।’
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র প্রধান প্রকৌশলী এবিএম মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ফুলবাড়িগেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম একটি এলাকা। মহাসড়কের উপর রেল ক্রসিং, রেল ক্রসিংয়ের উভয় পাশে সড়কের উপর অটোরিকশা, সিএনজি বাসস্ট্যান্ডে থেকে যাত্রী উঠানামা করানো হয়। ফুলবাড়িগেট বাজার রয়েছে। এখান থেকে একটি বাইপাস সড়ক গেছে। ফুলবাড়িগেট সংলগ্ন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) রয়েছে। ব্যস্ততম এ স্থানটিতে ওভারপাস নির্মাণ করা খুবই জরুরি।’
অন্যদিকে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে এই কারণে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) মাস্টার প্ল্যানের আওতাভুক্ত ফুলবাড়িগেট এলাকার কিছু জমির মালিকদের ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র (প্লান পাস) দেওয়া বন্ধ রেখেছে কেডিএ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। মহাসড়কের পাশে বাণিজ্যিক এলাকায় মূল্যবান এসব জমিতে প্লানপাস না পাওয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা।
খুলনা গেজেট/এনএম