মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষার অমিতাক্ষর ছন্দের স্রষ্টা। তিনি সিনেটের রূপকার। বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম সার্থক নাট্যকার। সার্থক মহাকাব্য রচয়িতা, প্রথম ট্রাজেডি রচয়িতা, প্রথম পত্রিকা কাব্যকর। এ পরিচিতির পাশাপাশি তিনি ব্যারিস্টার, শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতায় জীবনের স্বর্ণময় দিনগুলো কাটিয়েছেন।
যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদের তীরে দত্ত পরিবারের কুলপুত্র মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ১৮২৪ সালের ২০ জানুয়ারি তার জন্ম। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন মৃত্যু। উপনঞ্চাশ বছরের কর্মকোলাহলময় জীবনের দু’যুগ সময় তার কেটেছে সংবাদপত্রে। মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কর্মময় জীবনের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। আর কবির সাংবাদিকতা জীবনের দু’যুগের সাথে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের এ উদ্যোগ। এ উদ্যোগ সফল করতে কবির সাংবাদিকতা জীবন সম্পাদনা করেছেন আমাদের নির্বাহী সম্পাদক কাজী মোতাহার রহমান।
১৮৩৭ সালের কলকাতার নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিন্দু কলেজে (আজকের প্রেসিডেন্সী কলেজ) ভর্তি হন। তখন রিচার্ডসনের যুগ। এ সময় মধুসূদন দত্ত হাতে নিখে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা এতে স্থান পায়। কলকাতার বিদ্যাপীঠ পর্যায়ে এটাই হাতে লেখা প্রথম পত্রিকা। সপ্তাহে একদিন প্রকাশিত হত। এর স্থায়ীত্বকাল ছিল বারো মাস।
১৮৪৭ সালে কর্মসংস্থানের জন্য কলকাতা থেকে মাদ্রাজ আসেন, শহরের মেল অরফ্যান অ্যাসাইলামে ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। একই সময়ে মাদ্রাজ সার্কুলেটর পত্রিকায় লেখক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে এ পত্রিকার সহ-সম্পাদকহ হিসেবে চাকুরীর সুযোগ পান। এরপর জেনারেল ক্রনিকাল, এথেনিয়ান এবং স্পেকটেটর পত্রিকায় সাংবাদিকতা ও সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেন। সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে মাদ্রাজে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষকতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করে তিনি সংসার যাত্রা নির্বাহ করতেন (খসরু-পারভেজ রচিত মাইকেল মধুসূদন দত্ত)। ১৮৫২ সালে মাদ্রাজ হিন্দু ক্রনিকাল পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
সম্পাদক হিসেবে তার খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দু ক্রনিকাল পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলে মাদ্রাজ একজামিনার পত্রিকা মাধুসূদন দত্তের প্রশংসা করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় নিয়ে সমাজ-সাহিত্য সম্পর্কে মূল্যবান মতামত প্রকাশ করেন। ১৮৫৩ সালের ২৯ জুলাই মাদ্রাজ সার্কুলেটর পত্রিকায় ইংরেজ শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে মুসলিম শাসনামলের তুলনা করে মুসলমানদের স্বপক্ষে Mussalamans in India শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেন। সম্পাদকীয় প্রকাশিত হওয়ার পর শাসক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এথেনিয়ামসহ বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদকীয় লেখকের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে।
একজন অসম্প্রদায়িক সাংবাদিক ও কবি হিসেবে সে সময় তিনি মাদ্রাজে পরিচিতির শীর্ষে অবস্থান করতে থাকেন। ১৮৫৪ সালে মাদ্রাজ স্পেকটেটর নামে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হলে সহ-সম্পাদক হিসেবে চাকরী নেন। পুরোপুরি সাংবাদিকতায় ঝুঁকে পড়েন। ১৮৬১ সালে হিন্দু পেট্রিয়েট পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৮৬২ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলেতে গেলে সাংবাদিকতা জীবনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
খুলনা গেজেট/এমএম