এই তো সেদিনের কথা। এরই মধ্যে তিন বছর হয়ে গেল! ভাবতেও অবাক লাগছে। না আমি আমার নিজের কথা বলছি না। বলছি, খুলনা গেজেটের কথা। বিভাগীয় শহর খুলনার সাংবাদিকতা বর্ণাঢ্যপূর্ণ। এই শহরের সংবাদপত্রের ইতিহাসও দীর্ঘ। সে অর্থে অনলাইন পত্রিকার যাত্রা মাত্র সেদিনের।
ইতিপূর্বে খুলনা শহর থেকে বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। আবার তা হারিয়েও গেছে। আবার নামে-বেনামে কেউ কেউ যে দু-একটি অনলাইন পত্রিকা চালান না তা নয়! কিন্তু সেগুলোর কথা পাঠকরা যেমন জানেন না; যারা চালান তারাও সেটি ঠিকমতো দেখেন কী না তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এদিক দিয়ে ‘খুলনা গেজেট’ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
প্রকাশের দিন থেকেই সত্য খবর প্রকাশে কার্পন্য করেনি খুলনা গেজেট। আর এই কারণেই ঈর্ষনীয় পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে এই অনলাইন পত্রিকাটি -তা স্বীকার করতেই হবে। আমার মনে হয়, এই অনলাইন পত্রিকাটির পাঠকপ্রিয়তার প্রধান কারণ হচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে তার বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ। অবশ্যই সেই সব সংবাদ খুলনা অঞ্চলেরই। অর্থাৎ খুলনা বিভাগের খবর। তবে, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সংবাদ যে খুলনা গেজেট প্রকাশ করে না তা নয়। অনলাইন পত্রিকা হিসেবে দেশের অন্য যে কোনো অংশে বড় কোনো ঘটনা ঘটলেই খুলনা গেজেট দ্রুত সময়ের মধ্যে তা প্রকাশ করে। যা অনেক সময় ঢাকা থেকে প্রকাশিত বড় বড় পত্রিকার অনলাইন সংস্করণও প্রকাশ করতে পারে না।
খুলনা গেজেট মাত্র তিন বছরে খুলনা অঞ্চলের পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। তবে, তার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে এর সংবাদকর্মীদের। অবশ্য তরুণ এই সংবাদকর্মীদের পেছনে ইঞ্জিন হিসেবে রয়েছেন গাজী আলাউদ্দিন। যিনি জানেন একজন সংবাদকর্মীকে দিয়ে কীভাবে খবরের পেছনের খবর বের করে আনা যায় তার কায়দা-কানুন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে অনলাইনটির বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন স্নেহভাজন কৌশিক। হঠাৎ করেই তাঁর ফোন, লেখার আবদার। সত্যি কথা বলতে কী, আমি খুলনা গেজেটের একজন গুণমুগ্ধ পাঠক। তাই দাবি উপেক্ষা করতে পারিনি। স্বল্প সময়ের মধ্যেই অনুভূতিগুলো লিখতে হলো। পাঠক হিসেবে সময় পেলেই মুঠোফোনটি দিয়ে খুলনা গেজেটে চোখ বুলাই, দেখি- এই এই মুহূর্তে খুলনাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর কি আছে? খুলনা গেজেট দেখে তারপর অন্যান্য অনলাইনগুলোতে চোখ রাখি। আমি জানি, আমার মতো আরো অনেকেই খুলনা গেজেটে একইভাবে চোখ রাখেন।
ডেভিড ওয়েন রাইট বলেছেন, সাংবাদিকতা হল জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রের গতি প্রকৃতি বর্ণনার একটি কৌশল । চিন্তা ধারার উন্নয়ন,সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক রূপান্তরের ধারক ও বাহক হল সাংবাদিকতা । আর একটি সংবাদপত্র হচ্ছে এক একটি দিনের ইতিহাস বা ওই সমাজের প্রতিচ্ছবি। সাংবাদিকতা হচ্ছে শিক্ষা, সংস্কৃতি,অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন, বিনোদন প্রভৃতি বিকাশের মূল বাহন। বর্তমানে রেডিও, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট, ইন্টারনেট প্রভৃতির কল্যাণে সাংবাদিকতা আগের মত কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তাই বলা যায়, সাংবাদিকতা বর্তমানে মানুষের আচার-অনুষ্ঠান, কাজ-কর্মে প্রভাব বিস্তারকারী সবচেয়ে শক্তিশালী একটি উপাদানের নাম সাংবাদিকতা। তবে, আমাদের দেশে এখন কী ধরনের সাংবাদিকতা হচ্ছে তা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। যদিও মুখে তা স্বীকার করি না!
আমি বিশ্বাস করি বিগত বছরগুলোর মতো সামনের দিনেও সাংবাদিকতাকে সঠিক পথ দেখাবে নবীন ‘খুলনা গেজেট’। যদি তাকে একলা চলতে হয়-তাহলে সেই পথই তাকে বেছে নিতে হবে। কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় পেলে চলবে না। খুলনা গেজেটকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
খুলনা গেজেট/এমএম