শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিজে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হামলার পর সপরিবারে সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে কলম্বো ছেড়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজপাকসে। দেশটির সামরিক বাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার ভোরবেলায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিজ থেকে হেলিকপ্টারে ওঠেন মাহিন্দা ও তার পরিবারের সদস্যরা। ইতোমধ্যে তাদের গোপন বিদায়ের ভিডিওচিত্র সামাজিকে যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে প্রকাশ করেছে শ্রীলঙ্কার দৈনিক পত্রিকা ডেইলি মিরর।
বর্তমানে দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর ত্রিনকোমালিতে শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে সপরিবারে অবস্থান করছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। তবে সেই নৌঘাঁটিও বিক্ষোভকারীরা ঘিরে রেখেছেন বলে জানা গেছে।
ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে সোমবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন ৭৬ বছর বয়স্ক মাহিন্দা রাজাপাকসে। সোমবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও নিজের ছোটোভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
এদিকে, তার পদত্যাগপত্র দেওয়ার আগে সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের সামনে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়েছিল মাহিন্দার সমর্থকরা। তাদের হামলায় অন্তত ২০০ জন বিক্ষোভকারী আহত হন।
এ ঘটনায় আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে উত্তেজিত জনতা। সোমবার সন্ধ্যার পর শ্রীলঙ্কার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুরুনেঙ্গালায় মাহিন্দা রাজাপাকসের ব্যক্তিগত বাসভবন আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকরীরা। কাছাকাছি সময় হামলা হয় বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বাসভবনেও। সেসবও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
An airforce helicopter, allegedly carrying some members of the Rajapaksa family, was seen taking off from the Police Park Grounds in Colombo this morning.#SriLanka #lka #CrisisLK pic.twitter.com/oet0PZvEk6
— DailyMirror (@Dailymirror_SL) May 10, 2022
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার মধ্যরাতের দিকে টেম্পল ট্রিজের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন হাজারো বিক্ষোভকারী। এ সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভবনের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে।
পরে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন এবং হেলিকপ্টারে রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে টেম্পল ট্রিজ ত্যাগের ব্যবস্থা করেন।
শ্রীলঙ্কার সশস্ত্র বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ভোরের দিকে সংক্ষিপ্ত এক অপারেশনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন লক্ষ্য করে অন্তত ১০টি পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়েছে।’
করোনা মহামারি, উচ্চাভিলাষী ও অলাভজনক বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগ, ত্রুটিপূর্ণ করনীতি ও সরকারি অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে অনেকদিন ধরে জ্বালানি তেল, খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।
পাশপাশি, ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে ভয়াবহ আর্থিক ও মানবিক সংকট।
মাসের পর মাস ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কার জনগণ। গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কার ছোট-বড় সব শহরে শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।
জনগণের দাবি আংশিক মেনে নিয়ে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য। তারপর সোমবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজাপাকসে। ইতোমধ্যে সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য বিরোধী বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহও জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ড।
কিন্তু কোনো কিছুতেই কমছে না জনগণের বিক্ষোভ। এদিকে, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থা শ্রীলঙ্কা সরকারকে শর্ত দিয়েছে— দেশের পরিস্থিতি শান্ত না হলে আর্থিক সহায়তা মিলবে না।
খুলনা গেজেট/ এস আই