সরকার পতনের মধ্যে দিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সরকার বিদেশের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে। জনগণের উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হলে কোনো বিদেশি এগিয়ে আসবে না।
শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে পদযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে এ পদযাত্রার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলো একদফা দাবিতে আন্দোলন করছি। এই একদফার আন্দোলনের দাবির মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথাও আছে। আর বিএনপি চেয়ারপারসন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম ও লড়াই করছেন। বন্দি অবস্থায় কোন কিছু ঘটলে সকল দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এই উপমহাদেশের শুধু নয়, এশিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন নেত্রী। খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়েছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে। এখনো তিনি বন্দি অবস্থায় আছেন। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ।
তার কিছু হলে সরকারকে সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব নিতে হবে। আর তার আমলে মেয়েদের বিনামূল্যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। এভাবে তার অবদান বলে শেষ হবে না।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতি থেকে এসেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন। তিনি সারাদেশে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা তথা চারণ কবির মতো দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের পক্ষে জাগ্রত করে চলছেন। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। যেই দুই কোটি টাকার অভিযোগে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে সেই টাকা এখন ৮ কোটি টাকা হয়েছে। একই ধরনের মামলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে শুধু মুক্তি দেয়া হয়নি মামলা তুলে নেয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এরা অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার। তারা ১৫ বছর ধরে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে। এরা এখন গণতন্ত্রের জন্য নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের নেতাকর্মীদের কেউ ঘরে থাকতে পারে না। তাদেরকে পুলিশ হয়রানি করছে। এরা বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সবই ধ্বংস করেছে। আমরা এই সরকারের পদত্যাগ চাই। ইনশাআল্লাহ আগামীতে একটি ভালো নির্বাচন হবে। যেখানে জনগণ তাদের ভোট দিতে পারবে। সুতরাং এখনো সময় আছে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করবেন না, বাসা বাড়িতে হানা দিবেন না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। অবিলম্বে এক দফা দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। অবিলম্বে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে হবে। আর খালেদা জিয়া মুক্ত মানেই এই সরকারের পরাজয়। কিন্তু এই সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, আমরা এখানে এসেছি এই সরকারকে বিদায় করার জন্য। এই সরকার যদি ভেবে থাকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা, হামলা এবং পুলিশের ভয় দেখিয়ে রাজনীতি থেকে বিরত রাখতে পারবে। সেটা কোন দিন হবে না। আর জুলুম ও অত্যাচার করে কোন দিন এই অবৈধ সরকার টিকে থাকতে পারে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় জানাবো।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা কোনটাই সম্ভব না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে যেমন আমরা আপস করি না। তেমনি বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারেও আমরা কোন আপস করি না। আমরা তার মুক্তি চাই। কারণ অন্যায়ভাবে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। তাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অবিলস্বে তাকে সুচিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হোক এবং তাকে মুক্তি দেয়া হোক।
পদযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম এবং সঞ্চালনা করেন উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।
খুলনা গেজেট/ টিএ