প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে চায়নি, এখন কেন আন্দোলন করছে? ভোট চুরি করলে দেশের মানুষ মেনে নেয় না, খালেদা জিয়ার পদত্যাগই তার প্রমাণ।
শনিবার (১২ আগস্ট) গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় স্বাগত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতির কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কী অপরাধ করেছে যে পদত্যাগ করতে হবে? বিএনপি কেন এক দফার কথা বলছে। যারা স্বজনহারা তাদের জবাব কি খালেদা জিয়া দিতে পারবে? বিএনপি দেশের মানুষকে কী দিতে পেরেছে?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশকে আবার অন্ধকার যুগে ফেরাতে চায় বিএনপি। বিএনপির অত্যাচারের শিকার দেশের সর্বস্তরের মানুষ। যারা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে তাদের মুখে এখন নীতির কথা শুনতে হয়।
তিনি বলেন, বিএনপির মতো অত্যাচারের পথে হাঁটেনি আওয়ামী লীগ। ২১ আগস্টের হামলার আলামত পর্যন্ত রাখতে দেয়নি তারা। এখনও বিএনপির নেতারা আমাকে সরাসরি হত্যার হুমকি দিচ্ছে। কেন এমন করা হচ্ছে, এর জবাব বিএনপির কাছে চাইতে হবে।
বিএনপির সাজাপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়, তারা দেশের মানুষের কোনো উন্নতি করেনি, শুধু নিজেদের উন্নতি করেছে। দুহাতে লুটপাট করেছে। এজন্যই এখন লন্ডনে বসে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখন যখন বাংলাদেশে উন্নয়ন হয়েছে, তারা সরকার উৎখাত করতে চায়, এর মানে কি তারা আবার দেশকে পিছিয়ে নিতে চায়! আমরা বিএনপির মতো দেশকে পিছিয়ে নিইনি। ওরা আবার এলে ভাতা বন্ধ করে দেবে, বিআরটিসি বন্ধ, কমিউনিটি ক্লিনিক চিকিৎসা বন্ধ করে দেবে।
বিএনপির একদফা আন্দোলনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি একদফা আন্দোলন করছে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে! কী অপরাধ আমাদের? বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কত মৃত্যু-হত্যা-লাশ, গুম, কত ঘটনা ঘটেছে। ’৯১-এ যখন বিএনপি ক্ষমতায় এলো, কী দিতে পেরেছিল মানুষকে? তিনি আরও বলেন, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। তাদের কাছে প্রশ্ন-আজ বিএনপি-জামায়াতের এত আন্দোলন কেন? তখন খালেদা জিয়া বলেছিল, পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নেই! আমি জানতে চাই, পাগল আর শিশু তারা পেয়েছে কি না? সেই জবাবটা জাতির কাছে দিতে হবে।
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। এজন্যই ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নমিনেশন দেয়। খুনিদের সংসদে নিয়ে আসে। যারা এ হত্যাকাণ্ডে (জড়িত), তাদের পুরস্কৃত করল কীভাবে? ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন এ দেশের জনগণ মেনে নেয়নি, ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া বাধ্য হয় পদত্যাগ করতে। তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য, কারণ তারা জনগণের ভোট চুরি করেছিল। যারা জনগণের ভোট চুরি করে, তারা কোন মুখে নির্বাচন নিয়ে কথা বলে?
শেখ হাসিনা বলেন, রক্ত যাদের হাতে, তারা কোন মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে? যার হাত সেনাবাহিনীর রক্তে রঞ্জিত, সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত, তারা কীভাবে গণতন্ত্রের কথা বলে? ভোট চুরি করেছে, স্বৈরতন্ত্রের মাধ্যমে যাদের জন্ম, তারা কী গণতন্ত্রের কথা বলে? এরা এলে গণতন্ত্র থাকতে দেবে না।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচারের শিকার দেশের সর্বস্তরের মানুষ। খালেদা জিয়া যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, এটা আমাদের করা মামলা না। তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় করা মামলা।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে থেকে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের বিশেষ বার্তা দেয়া হবে। এছাড়া আগের সভায় তৃণমূলের যেসব নেতা অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দ্বন্দ্বের বিষয় দলীয় প্রধানকে অবহিত করেছিলেন সেসব বিষয়েও সভা থেকে নির্দেশনা আসতে পারে।
খুলনা গেজেট/কেডি