সরকার কর্তৃক চালের দর নির্ধারণের পর দুই মাস অতিবাহিত হলেও তা বাস্তবায়ন করেনি মিল মালিকরা। উপরন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার ধারাবাহিকতায় এখন আমন মৌসুমেও বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় এ দ্রব্যের দাম। ফলে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবনযাত্রায়।
খুলনা নগরীর বড় বাজরের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত দু’দিনে প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। আগে ভালো মানের সরু চাল সাড়ে ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা মঙ্গলবারের দর ছিল ৫৭ টাকা। একইভাবে ৫২ টাকার মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। আগামীতে এ দাম আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বড় বাজারের কিছু আড়ৎদার।
বাজারে নতুন চাল উঠতে শুরু করায় মোটা ও লোকাল চালের দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। খুলনার লোকাল মিনিকেট ৫২ টাকা, পরশ ৪৭ টাকা, বাসমতি আপেল মার্কা ৫৪ টাকা, ইরি নতুন ৩৫ টাকা, নতুন স্বর্ণা ৩৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার বটিয়াঘাটার ভাটিয়াল চাল ৭০ টাকা, ইরি আতপ ৪২ টাকা, চিনি গুড়ো ভালোমানের চাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা দরে।
অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ী নারায়ণ বাবু জানান, “সরকার চালের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর বড় বাজারের পাইকাররা ৫০ কেজি ওজনের বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বৃদ্ধি করেছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে আমাদেরও দাম বাড়াতে হয়েছে।” যদিও বড় বাজারের দু’একজন ব্যবসায়ী জানান, মিলাররা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল বিক্রি না করায় তারা খুলনার লোকাল চাল বিক্রি করছেন।
সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, “সরকার যদি চালের দাম নির্ধারণ করে থাকে তাহলে খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়লো কেন? মিল মালিকরা রীতিমতো সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে চায়।” বাজারে মনিটরিং আরও জোরদার করা দরকার বলে মনে করেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সরকার ভালমানের সরু ও মাঝারি মানের চালের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। খাদ্য মন্ত্রাণালয়ের সঙ্গে চালকল মালিকের বৈঠকে এ দাম নির্ধারণ করা হয়। এই দর অনুযায়ী, সরু মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৫৭৫ টাকা (প্রতি কেজি সাড়ে ৫১ টাকা) এবং মাঝারি মানের চালের বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকা (প্রতি কেজি ৪৫ টাকা) বিক্রি করার কথা। কিন্তু বর্তমানে মিল গেট থেকে সরু মিনিকেট প্রতি বস্তা ২ হাজার ৭৫০ টাকা (প্রতি কেজি ৫৫ টাকা) এবং মাঝারি মানের চালের বস্তা ২ হাজার ৪০০ টাকা (প্রতি কেজি ৪৮) টাকায় কিনতে হচ্ছে বলে পাইকাররা জানান।
৩০ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সব চালকল মালিককে সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়। কেউ তা না করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও হুশিয়ারি দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জানান, “চাল ব্যবসায়ীরা এই দামে চাল বিক্রি না করলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে সরু চাল আমদানি করা হবে।” এছাড়া নতুন দামে বিক্রি নিশ্চিত করতে ম্যাজিস্ট্রেট ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালাবেন বলেও ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
খুলনা গেজেট/এনএম