গত এক যুগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১২ বছর কম সময়! ১২ বছরে কি আমরা কম কাজ করেছি?
বুধবার(২০মার্চ) এফডিসি গেটে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এক্সিট র্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এই পুরো পথ চালু হতে কত দিন লাগবে? ঢাকা আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এর সঙ্গে যুক্ত হবে, দুটির সমন্বিত চলাচল কবে নাগাদ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘এটা এ বছর বোধ হয় সম্ভব হবে না। আগামী বছরের প্রথম দিকে আমরা পুরোটাই খুলে দিতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আমি একটু সময় নিলাম, তার আগেও হতে পারে।’ আপনারা বলেছিলেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করবেন। বাড়তি সময় কেন লাগছে; কোনো যৌক্তিক কারণ আছে নাকি কাজে অবহেলার কারণে সময় লাগছে—জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাজের গতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা উচিত নয়। আমরা পদ্মা সেতু করেছি, মেট্রোরেল করেছি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যে অংশটি আমরা করেছি; দিবারাত্রি পরিশ্রম করেছে আমাদের সংশ্লিষ্ট সবাই।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে কিছু জটিলতাও আছে। এখানে যেসব দেশ এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত, অর্থায়নের ব্যাপারটা নানা কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। যন্ত্রপাতি-যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা আছে। এটা হওয়া স্বাভাবিক এ ধরনের একটি বড় প্রকল্পে। কাজেই বিষয়টাকে অনাদরে-অবহেলায়, অনিচ্ছায় হচ্ছে না এটা মনে করা সমীচীন না।’
রমজান মাস শুরু হওয়ার পর থেকে রাজধানীতে তীব্র যানজট। এই যানজট কমাতে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘ইফতারের পর গোটা ঢাকা শহর বোধ হয় দেড়-দুই ঘণ্টায় ঘুরতে পারবেন। পার্টি অফিসে যে আমার লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট কিন্তু পাঁচ মিনিটে চলে যাই। ইফতারের পর; তখন তো যানজট থাকে না! যানজট একটা সময়ে থাকবেই। ঈদ আসলে ভিড় হয়। ঈদের শপিং আছে, শপিংয়ের জন্য সবাই মার্কেটে যায়। আর রোজার মাসে যানজট কোনো কোনো সময় হয়, সব সময় জটটা থাকে না। এটা আমরা সহ্য করে আসছি। আমাদের পরিকল্পনার সবটা তো হয় না।’
মেট্রোরেলে আসা-যাওয়ায় সময় ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তো স্বস্তি দিতে শুরু করেছি। রাতারাতি তো স্বস্তিদায়ক হবে না!’
আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে লক্কড়-ঝক্কড় বাসের চেহারায় কোনো পরিবর্তন হয়নি—এ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘কোনো পরিবর্তন হয়নি, বারবারই বলা হচ্ছে।’
এখানে সরকারের গাফলতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘এখানে সরকারের গাফলতির কী আছে? আমি কি গাড়ি রঙ করব নাকি?’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা তো নতুন নির্মাণ আমি করিনি। এটা তো আগেই হয়ে আছে। লক্কড়-ঝক্কড় বাস যখন আমি বন্ধ করে দেবো, তখন আপনারা সাংবাদিকরা সবার আগে বিক্ষোভ দেখাবেন। আপনারাই বলবেন, জনগণ অপেক্ষা করে আছে, রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ—গাড়ি নেই, গণপরিবহন নেই। এই অভিযোগ আপনারাই দিতে থাকবেন।
‘আমাদের তো শাঁখের কড়াতের মতো। এটা করলেও দোষ, ওটা করলেও দোষ। এসব গাড়ি আমরা বন্ধ করে দিতে পারি। এরপর ঢাকা শহরে তো রিপ্লেসমেন্ট নেই। রিপ্লেসমেন্ট হওয়ার আগে আমি গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে কী লাভ হবে? এসব গাড়ি তো বন্ধ করতে পারি, চেষ্টাও করেছি, তখন আপনাদের মধ্য থেকে প্রতিবাদ এসেছে যে, জনগণকে কষ্ট দিয়ে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে,’ বলেন তিনি।
আপনি ১২-১৩ বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন, এটা কি কম সময়? এই সময়ে রিপ্লেস করতে পারতেন না—গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সময়ে পদ্মা সেতুটা হয়ে গেছে, এই সময় এলিভেটেড এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট হয়ে গেছে। এই সময় মেট্রোরেল উত্তরা থেকে মতিঝিল চলে এসেছে। ১২ বছর কম সময়! ১২ বছরে কি আমরা কম কাজ করেছি?’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে আজকে কত ফ্লাইওভার! আপনি দেখেছেন কোনো দিন? কত ফোর লেন! যেদিকে যান, সমতল থেকে পাহাড়ে; রাস্তা আর রাস্তা। সীমান্ত সড়ক পর্যন্ত হচ্ছে। আপনি ১২ বছরের কথা এনে অপবাদ দিচ্ছেন কেন? ১২ বছরে বাংলাদেশে এই মন্ত্রণালয়ে যে কাজ হয়েছে, মেগা প্রকল্প, সেটা কি আর কোথাও হয়েছে? তাহলে কেন অপবাদ দিচ্ছেন!’
খুলনা গেজেট/ এএজে