খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৬৫
  গাজীপুরের শ্রীপুরে বোতাম তৈরির কারখানায় আগুনে নিহত ১
সরকারি মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়

ইতিহাস ঐতিহ্য ও গৌরবের ১৫৬ বছরে মুহসিন স্কুল

একরামুল হোসেন লিপুঃ

খুলনা তখনও আলাদা জেলা হয়নি। যশোর জেলার অন্তর্গত একটি মহকুমা এবং দৌলতপুর তখন ছিলো একটি নগণ্য পল্লী। সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেট কাচারী (হাজী মুহাম্মদ মুহসিন এস্টেট) তখন দৌলতপুরে অবস্থিত ছিলো। ম্যানেজার বাবু ক্ষেত্র গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় এই কাচারীতে থাকতেন। তিনি স্থানীয় প্রজাসাধারণের ছেলেদের শিক্ষার জন্য এ অঞ্চলে একটি এ্যালো ভার্নাকুলার স্কুল খোলার পরিকল্পনা করেন এবং এ বিষয়ে তদানীন্তন এস্টেট’র ইনচার্জ ডেপুটি কালেক্টরেট বাবু ব্রহ্মনাথ সেনের সাথে আলাপ করেন। সম্মতি পেয়ে ম্যানেজার বাবু কালবিলম্ব না করে আর্থিক ব্যবস্থাপনার কথা না ভেবে ১৮৬৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন।

দৌলতপুর বাজারের বাবু গৌর মোহন সাহার দোকানে মাত্র ৫৪ জন ছাত্র নিয়ে এ বিদ্যালয়ের শুভযাত্রা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান সেনহাটী গ্রামের বাবু অভয় কুমার সেন। তিনি বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক। দায়িত্ব পালন করেন মাত্র ৫ মাস। বিদ্যুৎ বেগে স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা পার্শ্ববর্তী মহেশ্বরপাশা, সেনহাটী, বারাকপুর, দেয়ানা, পাবলা, রায়ের মহল, খালিশপুর, চন্দরীমহল প্রভৃতি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এবং এক মাসের মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৫৪ থেকে ১০০ জনে বৃদ্ধি পায়। ছাত্রবৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকবৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দেয়ায় ঢাকার রাজমোহন ঘোষ ১৯৬৭ সালের ৬ জুলাই থেকে এ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

ছয় মাসের মধ্যে ছাত্র ভর্তি এমন সাড়া পড়ে গেল যে বাবু গৌর মোহন সাহার কামরা যথেষ্ট ছিলোনা। ফলস্রুতিতে মহেশ্বরপাশা নিবাসী বাবু উমাচরণ মুখার্জির বাড়িতে স্কুল স্থানান্তরিত হয়। ছাত্রদের কাছ থেকে তখন মোট বেতন আদায় হতো ১৭ টাকা এবং এস্টেট কর্তৃপক্ষের দেওয়া ৫৪ টাকা মিলে সর্বমোট আদায় ছিলো ৭১ টাকা। এ সময় প্রধান শিক্ষকের বেতন ৩০ টাকা, দ্বিতীয় মাস্টার ২০ টাকা, প্রধান পন্ডিত ২০ টাকা এবং ঝাড়ুদার মাসির বেতন পেতো ১ টাকা।

স্কুল প্রতিষ্ঠার অল্প কিছুদিনের মধ্যে এই স্কুলে কিছু ছাত্র কৃতিত্বের সাথে পাশ করে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। বাবু কেদারনাথ মজুমদার ইঞ্জিনিয়ার, বাবু যাদব চন্দ্র দাস, বাবু যদুনাথ দাস, বাবু কুঞ্জবিহারী মিত্র, বাবু দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার প্রভৃতি নাম উল্লেখযোগ্য। প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে তখন বাবু কুঞ্জবিহারী মিত্র স্কুলের জন্য দুষ্প্রাপ্য এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটেনিকা বই আলমারিসহ দান করেন।

স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকায় স্কুলের জন্য স্বতন্ত্র ভবন তৈরি করা জরুরী হয়ে পড়ে। সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেটের তদানিন্তন এজেন্ট ও যশোরের কালেক্টর মিঃ মনরো আই. সি. এস স্বয়ং হস্তক্ষেপ করে স্কুলের ভবন সমস্যার সমাধান করেন। তিনি ট্রাস্ট এস্টেটের বাংলোতে স্কুল স্থানান্তরের নির্দেশ দেন এবং বাবু মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নামক একজনকে তিনি মাসিক ১৫ টাকা বেতনে ইংরেজি শিক্ষক নিযুক্ত করেন। তিনি স্কুলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট চেষ্টা করেন।

খুলনা জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান খান সাহেব শামসুর রহমান বি এল ও জনাব আব্দুল হামিদ বি এল পরপর কয়েক বছরের জন্য স্কুলের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদাধিকারবলে স্কুলের সভাপতি ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রীয় কার্যে ব্যস্ত থাকায় তার পক্ষে সদর এস,ডি,ও ও পরবর্তী পর্যায়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণের মধ্য থেকে একজনক এ বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ১৯৩৯ সালের ১জুলাই থেকে কাজী নজিব উদ্দীন স্কুলের প্রধান শিক্ষক হলেন। তার সময় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন হলে সাহিত্যিক ডাঃ আবুল কাসেম সাহেব সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবু প্রতাপচন্দ্র মজুমদার প্রধান শিক্ষক হলেন। এ সময় স্কুলের মসজিদের পিছনের জমিতে শিক্ষকরা ঘর তুলে থাকতেন। সেটি পরবর্তীতে পাকা হোস্টেল ঘরে পরিবর্তিত হয়। পূর্বে এই স্থানে হিন্দু ছাত্রদের মেস ছিলো।

১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার দিনে স্কুলের ছাদে পাকিস্তানি ও ভারতীয় পতাকা পাশাপাশি উত্তোলন করা হয়। ১৭ আগস্ট থেকে খুলনা পাকিস্তানভুক্ত হওয়ায় ভারতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়। ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ডাঃ আবুল কাসেম সাহেব সম্পাদক হিসেবে স্কুলের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন। ডাঃ আবু্হেল কাসেমের পর অধ্যাপক কওসার আলী সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকায় চলে গেলে শেখ নেছার উদ্দিন বি, এ স্কুলের সম্পাদক হন। ১৯৫৬ সালের ২১ আগস্ট থেকে প্রতাপ বাবুর স্থলে প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন মোঃ সালেম।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সামরিক শাসন জারি করলে স্কুলটি একটি সামরিক ক্যাম্পে পরিণত হয়। কিছুদিন পর ক্যাম্প উঠে গেলে সালেম সাহেব স্কুল ত্যাগ করেন এবং ডাঃ আবুল কাশেম সাহেব পুনরায় সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে মির্জা ইব্রাহিম হোসেন বিসিএসকে ১৯৫৯ সালের ৩১ আগস্ট প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি অবসর গ্রহণ করায় ১৯৬০ সালের ১ অক্টোবর থেকে প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন মোঃ শামসুল হক বি,এ,বি,এড এবং পুনঃ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ নেছার উদ্দিন। সরকার এ সময় স্কুলের জন্য ১ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা মঞ্জুর করেন। ১৯৬০ সালে সরকারের মঞ্জুরকৃত এই অর্থ দিয়ে একতলা ভবন দক্ষিণ পার্শ্বের ইমারত দোতলা ও প্রধান ইমারতের সংস্কারসহ হোস্টেল নির্মাণ সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়।

সূত্র-“স্বপ্ন” বিদ্যালয় বার্ষিকী ২০০২ ‘তে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলাম জোয়ার্দারের লেখা থেকে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!