যশোরের চৌগাছায় এবার সরকারি বাওড় মৎস্য প্রকল্পের অধীন মর্জাদ বাওড়ের পাঁচ হাজার ট্রাকের বেশি মাটি ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাওড়ের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান এবং বাওড়ের নৈশ প্রহরী লাল্টুর বিরুদ্ধে এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রণি সম্পদ মন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন বাওড়ের হ্যাচারি অংশ লিজ নিয়ে মাছ চাষকারী মোঃ ভুট্টো মিয়া।
ওই মাছ চাষীর অভিযোগ মাটি বিক্রিতে বাঁধা দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বাওড় ব্যবস্থাপক তাকে মৌখিক চার লাখ টাকা চুক্তিতে চাষ করতে দেয়া বাওড়ের হ্যাচারি অংশের প্রায় চল্লিশ বিঘার ভেড়িতে কিটনাশক প্রয়োগ করে তাঁর মাছ মেরে ফেলেছেন।
রবিবার (৬মার্চ) তিনি লিখিত অভিযোগের অনুলিপি যশোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বাওড় মৎস্য প্রকল্পের যশোর কার্যালয়, চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। একই অভিযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, খুলনার ডিআইজিসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন।
এদিকে বাওড়ের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দেয়ার মৌখিক অভিযোগ পেয়ে গত শুক্রবার চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা হাকিমপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তিনি ঘটনাস্থলে যেয়ে মাটি চুরি করে বিক্রি করার বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছেন।
মন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগে মোঃ ভুট্টো মিয়া বলেন, গত তিন/চার বছর আগে চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের হাজীপুরে অবস্থিত মর্জাদ বাওড়ের পড়ে থাকা হ্যাচারী অংশের ৪০ বিঘা ভেড়িতে মাছ চাষ করেন। চার লক্ষ টাকা বাৎসরিক মৌখিক চুক্তিতে আমি বাওড়ের হ্যাচারী অংশের ৪০ বিঘা জমিতে এই ভেড়ি চাষ করেন তিনি।
ভুট্টো বলেন, সম্প্রতি বাওড় ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান ও নৈশপ্রহরী লল্টু স্থানীয় মাটি চোরদের সহায়তায় বাওড়ের হ্যাচারী অংশের ভেড়ির পাড় থেকে পাচঁ হাজারের অধিক ট্রাক মাটি স্কেবেটর দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইট ভাটা এবং হাকিমপুর বড় মার্কেটসহ বিভিন্ন এলকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। মাটি কাটায় আমার মাছ চাষের ক্ষতি হওয়ায় আমি বাধা দিই। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হ্যাচারী অংশে আমার লিজ নিয়ে করা মাছ চাষের জমি ছেড়ে দিতে নোটিশ করেন। আমি নোটিশ পেয়ে মাছ তুলে বিক্রি করে দেয়ার জন্য পানি সেচ করে কমিয়ে ফেলি।
বৃহস্পতিবার (৩মার্চ) আমার ভেড়ি থেকে মাছ ধরে বিক্রি করার কথা ছিল। এরইমধ্যে ব্যবস্থাপক মাহবুব ও নৈশপ্রহরী লাল্টু তাদের স্থানীয় সহযোগিসহ আমার কাছে চাঁদা দাবি করে বলে ‘তুই আমাদের মাটি বিক্রিতে বাধা দিয়েছিস, এখন আমাদের চাঁদা দিবি’। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ক্ষুব্ধ হয়ে বাওড় ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান ও নৈশ প্রহরী লাল্টুর নির্দেশে হেলাল, জসিম, রুবেল, হাসান মেম্বার, জাহিদ ও বিপ্লবরা বুধবার (২মার্চ) সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে ভেড়ির প্রহরীরা বাড়িতে সকালের খাবার খেতে গেলে ভেড়িতে গ্যাস ট্যাবলেট ছিটিয়ে আমার ভেড়ির সমস্ত মাছ মেরে ফেলে। যা বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে।
এদিকে সরকারি বাওড়ের মাটি অবৈধভাবে বিভিন্ন ইটভাটা ও মার্কেটে বিক্রি করে দেয়ার মৌখিক অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা শুক্রবার হাকিমপুর ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা দলীল উদ্দিনকে তাৎক্ষণিক বিষয়টি প্রাথমিক তদন্ত করার নির্দেশ দেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মর্জাদ বাওড়ে যেয়ে মাটি চুরি করে বিক্রি করে দেয়ার বিষয়টির সত্যতা পান।
এ বিষয়ে হাকিমপুর ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা দলীল উদ্দিন মোবাইলে বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি চুরি করে বিক্রির ঘটনার প্রমাণ পেয়েছি। আমি যাবার আগেই তাঁরা এই মাটি বিক্রি করেছে। ঘটনাস্থলে কোন স্কেবেটর বা ট্রাক পাইনি। তিনি বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় নির্দেশ দিলে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেব।
মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও অভিযুক্ত বাওড় ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত মামলা করা হবে। তিনি বলেন মৌখিক অভিযোগ পেয়েই ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। তিনি মাটি বিক্রির সত্যতা পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি নিজে বাওড় ব্যবস্থাপককে একাধিকবার কল করেছি। তিনি মোবাইল সংযোগ বন্ধ রেখেছেন।
এরআগে চৌগাছার ভৈরব নদ থেকে মাটি চুরি এবং কপোতাক্ষ নদ থেকে বালি চুরির বিরুদ্ধে একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেও ফল না আসায় এবং অভিযানের সময় মাটি ও বালু চোররা পালিয়ে যাওয়ায় তিনটি নিয়মিত মামলা করে উপজেলা ভুমি প্রশাসন। এসব ঘটনায় দুটি ট্রাক, একটি মটরসাইকেল এবং ৮টি বালু তোলা মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদিও জব্দ করা হয়।
খুলনা গেজেট/এএ