প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমেরিকাতে ১৮ দিন ঘুরে এলেন। এখন আবার ব্রাসেলসে যাচ্ছেন। চারদিকে ঘোরাঘুরি শুরু করেছেন। ওই ঘুরে ঘুরে যদি কোনো রকমে সামাল দেয়া যায়। আর ঘোরাঘুরি করে কোন লাভ নাই। এদের সময় হয়ে গেছে। তাদের বিদায় নিতেই হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এদেশের সকল মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। আপনাদের হাত থেকে বাঁচতে চায়। এখনো বলছি, আমাদের মান্না সাহেব দুর্গাপূজার কথা বলেছেন।
দুই-চারটা দিন ছুটি থাকবে। এসময়ে নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেন। সব মানুষ ভোট দিবে এবং ভোট দিতে যাবে। আপনার তো কোনো প্রয়োজন নেই আর।
আওয়ামী লীগ সবচেয়ে প্রতারক দল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে বলবে এক কথা আর কাজ করবে আরেকটা। আজকে বলেছে, নির্বাচনের বিষয়ে মার্কিন একটা টিম এসেছিলো। বুধবার তাদেরকে বলেছেন, এখানে তো আমরাই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিয়ে এসেছি। আর গত দুটি সুষ্ঠু নির্বাচন তো আমরাই করেছি। আবার করবো। আমার ওপর আস্থা রাখেন আমি আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করবো। এটা হচ্ছে শিয়ালের মুরগি বর্গা দেয়া। আর না। এনাফ ইজ এনাফ।
বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের ঘটনার চিত্র তুলে ধরে ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এখান থেকে আপনারা একটা বার্তা পাবেন। সেই বার্তা হচ্ছে, মুখ বুঝে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। আপনারা যদি নিজেরা বাঁচতে চান, দেশকে বাঁচাতে চান, আপনাদের বাবা-মা-ভাই ও বোনদেরকে বাঁচাতে চান তাহলে জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠতে হবে এবং রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। লড়াই ও সংগ্রাম করে তাদেরকে (সরকার) পরাজিত করতে হবে। অন্যথায় আপনার মাথার ওপর চেপে বসবে। আজকে এ্যানীকে যেভাবে মেরেছে। কালকে আপনাকে সেভাবে মারবে। অনেকে বলে তরুণদের ক্ষোভ মোবাইল সেটে। ক্ষোভ মোবাইলে দিলে হবে না। ক্ষোভ রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসেছে তাদেরকে পরাজিত করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে। আর যেটা ভিপি নুর ও মান্না সাহেব বলেছেন, দখল করে নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়।
ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, আমরা একটা বড় যুদ্ধে নেমেছি। সেই যুদ্ধটা হচ্ছে, একটা ভয়াবহ ফ্যাসিবাদি শক্তিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার যুদ্ধে আমরা নেমেছি। আর লক্ষ্য একটাই। আমরা এই ভয়াবহ ও ফ্যাসিবাদি সরকারকে সরাতে চাই। আজ আশাবাদীর দিন। কারণ এদেশে যা কিছু কল্যাণকর ঘটেছে, যা কিছু মহৎ ঘটেছে এবং যা কিছু বদলে দিয়েছে- তার সব কিছুই এই ছাত্র ও যুবকদের দ্বারা। আজকে এজন্য আমি অত্যন্ত আশাবাদী।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়কারী ও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে কনভেনশনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই শিকদার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, গণফোরাম একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুক, সহ-স্বেচ্ছাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক মানসুরা আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।