নদী ও বাংলাদেশ একই সুত্রে গাঁথা দুটি নাম। এদেশের মাটি ও মানুষের সাথে নদী ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। এদেশে সর্বত্র জালের মতো বিছিয়ে আছে নদী আর তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য হাওড়-বাঁওড়- জলাশয়। এ সব নদ-নদী ও হাওড়-বাঁওড় বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বৈচিত্র্য দান করেছে। এজন্য বলা হয় বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ।
আমাদের জীবন,সাহিত্য, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সর্বস্তরেই নদী জড়িয়ে আছে। কিন্তুু নদীগুলো কি সঠিক আকারে আছে দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, কিছু ইতোমধ্যেই মরে গেছে এবং বেশ কিছু মৃত প্রায়। আমাদের ঐতিহ্যবাহী বুড়িগঙ্গা নদীর কথা ধরা যাক, এক সময় এই নদীতে জোয়ারভাটা হতো। আজ দূষণের কারণে নদীটি মৃত প্রায়। প্রতিদিন নদীতে প্রচুর পরিমাণে কল-কারখানা,রাসায়নিক পদার্থ ও আবর্জনা ফেলা হয়। ঢাকা শহর প্রতিদিন প্রায় ৪৫০০ টন নিরেট নির্গমন করে এবং তার অধিকাংশই সরাসরি বুড়িগঙ্গায় ফেলা হয়। অধিকাংশ কলকারখানা নদীর তীরে অবস্থিত, সেচের জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার,বর্জ্য আবর্জনা নদীতে ফেলানো নদী দূষণের অন্যতম কারণ। অন্যদিকে কিছু সুবিধাবাদী মানুষ হাওড়-বাওড় গুলা তাদের দখলে নিয়ে সুবিধা মতো ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িত আছে এদেশের আঁশি শতাংশ লোক। মানুষ পানি ছাড়া বাঁচতে পারি না। কৃষি চাষ এবং আমাদের বেচে থাকা দুটোয় পানির উপর নির্ভরশীল। এখন আপনি বলতে পারেন, যেহেতু আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়, সেহেতু আমাদের কি পানি সংকটের সম্পর্কে চিন্তিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে? তাছাড়া পাশে আমাদের একটি সমুদ্র আছে। এর উত্তরে স্যামুয়েল টেইলর কোলেরিজের কবিতাটা বললো,” পানি, পানি সবখানে এবং সকল জাহাজ গেছে থেমে ; কিন্তুু পানযোগ্য এক ফোটাও নেই। ”
পানির সংকট একটি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। যতোই দিন যাচ্ছে এ সংকট আরো তীব্র হচ্ছে।জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে এ সংকট। বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী পানির সংকটের মধ্যে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে সব দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।এখনই আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে অন্য দিকে আমারা আমাদের নদীগুলো দূষণ করছি। এখন যে পানি আমরা সহজে ব্যবহার করতে পারছি অদূর ভবিষ্যতে এই পানির চরম সংকটে ভুগতে হবে আমাদের।
প্রায় ৫৭টি নদী অন্য দেশ থেকে উৎপত্তি লাভ করে আমাদের দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এসব নদীগুলোর ন্যায্য চুক্তিভিক্তিক পানি বন্টনের জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে। রাসায়নিক বর্জ্য,ময়লা- আবর্জনা এগুলা নদীতে ফেলা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। অবৈধভাবে খাল-বিল দখল করে রাখা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মৃত নদ-নদী খননের ব্যবস্থা করতে হবে। ছোট ছোট জলাশয়ের সাথে বড় নদীর সংযোগ করলে আমাদের নদ-নদী গুলো পাবে তাদের হারানে যৌবন। সেই সাথে আমরা পাবো সুন্দর কৃষি সেচের ব্যবস্থা,কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে। নদীতে মাছ ও পানিতে থৈথৈ করবে।এভাবে আমরা আমাদের নদী মাতৃক বাংলাদেশের গৌরব ফিরে পাবো।
(লেখক : শিক্ষার্থী, আইন ২য় বর্ষ , শেখ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)
খুলনা গেজেট /এমএম