করোনাকালীন সময়ে সমিতির সুদের টাকা দিতে না পারার কারণে মনোরঞ্জন রায় (৭৫) নামের এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাত করে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তালা উপজেলার গোপালপুর স্লুইস গেটের পাশে এ ঘটনা ঘটে। তাকে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসাধীন মনোরঞ্জন রায় জানান, দীর্ঘ আট বছর যাবৎ তিনিসহ কয়েকজন মিলে মাঝিয়াড়া গ্রামের কুমারেশ বিশ্বাসের বাড়িতে গ্রামীণ সমিতি পরিচালনা করে আসছেন। কুমারেশ বিশ্বাসের স্ত্রী পুষ্প রানী বিশ্বাস ও তার ছেলে মানিক বিশ্বাস সমিতির নির্ধারিত তিন টাকা হারে সুদ নিয়ে অন্যত্র সাত থেকে আট টাকা হারে সুদ খাটাতো।
গত চৈত্র মাসে সমিতির কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলেও তিনিসহ কয়েকজন করোনার কারণে সামান্য কিছু সুদের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে কুমারেশ বিশ্বাসের স্ত্রী পুষ্প রানী বিশ্বাস ও ছেলে মানিক বিশ্বাস গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় মফিজুলের বাড়ি থেকে পড়িয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার উপর তার উপর হামলা চালায়। এ সময় তার কাছ থেকে জোরপূর্বক নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ছিঁড়ে ফেলা হয় তার পরিহিত জামাকাপড়। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
পরদিন তার ছেলে সুমন রায় গণেশের কাছ থেকে বাই সাইকেল কেড়ে নেওয়ার জন্য রাস্তার উপর টানা হেচড়া করা হয়। এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি অভিযোগ করেন।
তালা থানার এএসআই মোঃ নাসির উদ্দিন প্রতিপক্ষদের বৃহস্পতিবার বিকেলে থানায় আসতে বলেন। তবে পুত্রবধূকে তালা সার্জিকাল ক্লিনিকে ভর্তি করাতে যাওয়ায় তিনি তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে সময় চান। তদন্তকারি কর্মকর্তা পুত্রবধূর সিজার করার জন্য সময় দেন।
তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে তিনি মফিজুলের বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়িয়ে রাস্তার উপর উঠতেই কুমারেশ বিশ্বাসের স্ত্রী পুষ্প রানী বিশ্বাস ও ছেলে মানিক বিশ্বাস তাকে টানতে টানতে প্রধান সড়কে তোলে। প্রতিবাদ করায় পুষ্প রানী তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে বাম হাতের কব্জির উপর টান দেয়। এতে অনেকটা কেটে গিয়ে রক্তাক্ত জখম হয়। এ সময় মিঠুনের দোকানের পাশে তাকে ফেলে দিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি মারা হয়। এ সময় পথচারিরা তাকে উদ্ধার করে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
মাঝিয়াড়া গ্রামের অর্জুন সরকার বলেন, ‘পুষ্প রানীর বাড়িতে তিনিও গ্রাম সমিতি করেন। মনোরঞ্জ রায়ের কাছে সামান্য সুদের টাকা বাকি থাকলেও তিনিসহ কয়েকজন পুষ্প বিশ্বাস ও তার ছেলে মানিকের কাছে দু’লক্ষাধিক টাকা পাবেন। করোনার কারণে সুদের টাকা চাওয়া যাচ্ছে না। তবে মনোরঞ্জন রায় এর কাছে সুদের টাকা আদায়ের নামে যে হামলা চালানো হয়েছে তা অমানবিক।’
তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সোহান বলেন, ‘মনোরঞ্জন রায়ের বাম হাতের কব্জির উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ফলে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। এ ছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখমের চিহ্ন আছে।’
পুষ্প রানী বিশ্বাস বলেন, ‘করোনা বোঝেন না, সমিতির নিবন্ধন থাক বা না থাক, ১০ হাজার টাকা সুদের টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা আদায় করা হবে। মারপিটের বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ করলে মনো বুড়োকে এলাকা ছাড়া করা হবে।’
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে হামলাকারিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
খুলনা গেজেট/এনএম