ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী ২৪ ডিসেম্বর তাদের ২২তম ত্রৈবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল করতে প্রস্তুত। এখন পর্যন্ত একটি বিষয়ই নিশ্চিত যে, দলটি সভাপতি হিসেবে ১০ম বারের মতো নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে দীর্ঘ নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি।
সবার দৃষ্টি এখন দলটির সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে, যেটি দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ হিসেবে বিবেচিত।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার হাতকে শক্ত করতে কে এই পদে অধিষ্ঠিত হবেন, তা দেখার অপেক্ষায় দেশের ঐতিহ্যবাহী দলটির নেতা, কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
নির্বাচনের জন্য দলের ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতাকর্মীরা জানতে আগ্রহী, কাকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান এই ইশতেহার বাস্তবায়ন করবেন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাউন্সিলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে পুনর্নির্বাচিত বা তার জায়গায় অন্য কাউকে আনা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এই কাউন্সিলে অংশ নেবেন প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং ১৪ হাজার প্রতিনিধি।
২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের পদ পান ওবায়দুল কাদের। ২১তম কাউন্সিলে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন।
কিছু আওয়ামী লীগ নেতা মনে করেন, এই পদটি এমন একজন তরুণ নেতার পাওয়া উচিত, যিনি তৃণমূলকে পুনরুজ্জীবিত করতে সারাদেশে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
আবার অনেকে মনে করেন, কাউন্সিলটি কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতা, কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিট রয়েছে এবং এর মধ্যে ৩৯টিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ইউনিটে নতুন নেতৃত্ব এসেছে, ২৪টিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং ৮টিতে ছোটখাটো পরিবর্তন এসেছে।
তারপরও অনেকে মনে করেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ ও আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাসিম, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের মধ্যে কেউ একজন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে না। কেননা, শেখ হাসিনা ৮১ সদস্যের এই কমিটিকে আরও বড় করতে আগ্রহী নন।
তারা জানান, সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের সাবেক নেতাদের মধ্যে অন্তত ২০টি নতুন মুখ কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে পারেন।
এবার কাউন্সিলের উদ্বোধন অধিবেশনে বিদেশি রাজনৈতিক দলের কোনো প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ না জানানো হলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানাবে আওয়ামী লীগ।
দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারির কারণে উদ্ভূত চলমান আর্থিক সংকট বিবেচনা করে কাউন্সিল হবে একদিনের।
দলটি কাউন্সিলের জন্য ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে প্রচার ও প্রকাশনা বাবদ ২৪ লাখ টাকা, অফিস খরচ বাবদ ৫ লাখ টাকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাবদ ১০ লাখ টাকা, খাবার বাবদ ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা বাবদ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কাউন্সিলের মঞ্চটি নৌকার আকৃতির হবে এবং অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ সরকারের বেশ কিছু অর্জনের ছবি রাখা হবে।
২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এই কাউন্সিল থেকেই এবং নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে শেখ হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশনা পাবেন।
কাউন্সিলে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে দলটি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, ‘কাউন্সিল নিবেদিতপ্রাণ, সাহসী ও পরীক্ষিত নেতাদের নির্বাচন করবে। যেহেতু আমরা বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট কান্ট্রিতে পরিণত করতে চাই, কাজেই নতুন কমিটি হবে তরুণ ও অভিজ্ঞ নেতাদের সমন্বয়ে।’
তিনি জানান, দলের নির্বাচনী কৌশল ও ঘোষণা কেন্দ্রীয় পরিষদই গ্রহণ করবে।
নিজের প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাইলে নাসিম বলেন, ‘আমরা মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ মুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ চাই। কাউন্সিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সেই লক্ষ্যে একধাপ এগিয়ে যাবে।’
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সকল গণতান্ত্রিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে জনগণের সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে।
দলটিকে প্রাথমিকভাবে ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে তৃতীয় কাউন্সিলের সময় ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা ৯ বার দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪ বার এবং আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ৩ বার আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ৫ বার, তাজউদ্দীন আহমদ ৪ বার, জিল্লুর রহমান ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ৩ বার করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া, আব্দুর রাজ্জাক ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২ বার করে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন এবং পালন করেছেন।
খুলনা গেজেট/ এসজেড