রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান। ভয়াবহ এই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের কয়েকটি মার্কেটও। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী।
সারা বছরের মধ্যে রজমান মাসেই কাপড় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা হয় বেশি। রোজার ঈদকে সামনে রেখেই কোটি কোটি টাকার কাপড় মজুত করেছিলেন তারা। ঘুম থেকে উঠেই দেখেন- তাদের রুটি-রুজির স্বপ্ন ভয়াবহ আগুনে জ্বলছে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় সব কিছু।
বঙ্গবাজার মার্কেটে তিন ভাই জামাল মিয়া, চান মিয়া ও কামাল মিয়ার দোকান ছিল। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিন ভাইয়ের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকান থেকে কিছুই বের করতে পারেননি তাঁরা। সব হারিয়ে এখন শুধুই কাঁদছেন তিন ভাই।
বছর দুয়েক আগে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ৪০ লাখ টাকা দিয়ে বঙ্গবাজারে একটি দোকান ভাড়া নেন ইব্রাহিম। ঈদের আগে নতুন মালামালসহ তার দোকানে ২০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের মালামাল ছিল। কিন্তু আজ সকালের আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
ইভা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম আহাজারি করতে করতে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
আরেক দোকানমালিক বলেন, আমি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। কীভাবে পরিবারের ভরণপোষণ করব জানি না।
সিরাজুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী আগুন লাগার খবর পেয়ে বঙ্গবাজারে ছুটে যান। সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার দোকানে ২০ লাখ টাকার পোশাক ছিল। আমি প্রায় অর্ধেক পণ্য বের করতে পেরেছি, কিন্তু সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। পানির কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
আরেক ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, তিনি তার দোকান থেকে এক টুকরো কাপড়ও বের করতে পারেননি। আগুনের ভয়াবহতার কারণে ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল উদ্ধার করতে পারেননি। আশেপাশের অনেক দোকান থেকেও অনেক মানুষকে তাদের জিনিসপত্র বের করতে দেখা গেছে। তারা তাদের মালামাল রাস্তায় রেখেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একজন দিদার হোসেন বলেন, আমার দোকানে ১০ লাখ টাকার নতুন জামাকাপড় ছিল। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আওলাদ হোসেন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। আগুন আমাদের সব আশা কেড়ে নিয়েছে।
বঙ্গবাজারে ২টা ও এনেক্সকো টাওয়ারে ১টি শাড়ির দোকান ছিলো সাইদুর রহমানের। এখন সব আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে। তিনি বলেন, আগুনের খবর পেয়ে সাতটার দিকে এসেছি। এসে দেখি পাশের মার্কেটে আগুন। আসার পর বঙ্গ মার্কেটে আগুন লাগতে দেখেছি। তখন সামান্য মাল সরাতে পেরেছি। এরপর এনেক্সকো মার্কেটেও আগুন লেগে যায়।
নারী ও শিশুদের জামাকাপড়ের ২টা দোকান সাইফুল ইসলামের। তিনি বলেন, ৮ টায় এসে দেখি বঙ্গমার্কেট পুড়ে শেষ। আমাদের গোডাউনে সব মাল থাকে। বঙ্গতে গোডাউন। ওগুলো কেউ বের করতে পারে নাই। সব পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু পানি নাই। আগুন সব দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
ভ্যানে করে বস্তাভর্তি জামাকাপড় সরাচ্ছিলেন গাড়ি চালক শাহ আলম। তিনি বলেন, মহানগর মার্কেট থেকে কিছুটা মাল সরানো গেছে। এখন এটাও পুড়ছে। আগুনে সব শেষ।
খুলনা গেজেট/এনএম