সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচনী প্রতিনিধিদল। দুই মন্ত্রীর কাছে তারা জানতে চেয়েছে, সব দল নির্বাচনে অংশ না দেওয়ার কোনো আশংকা আছে কি-না। জবাবে দুই মন্ত্রীই অভিন্নভাবে বলেছেন কে আসবে বা আসবে না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।
আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সভা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে আসবে কে আসবে না, তা নিয়ে আশঙ্কা আছে কি না, তা আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে জানতে চেয়েছে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচনী প্রতিনিধিদল। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান সরকার চায়, সব দল নির্বাচনে আসুক। কিন্তু কে নির্বাচনে আসবে কে আসবে না, সেটি সেই দলের সিদ্ধান্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলটি বুধবার দুপুরের পরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে। পরে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন এবং এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওনারা (মার্কিন প্রতিনিধিদল) জিজ্ঞেস করেছেন, এ রকম আশঙ্কা করা হচ্ছে কি না, নির্বাচনে কে আসবে কে আসবে না। আমি বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চায়, সব দল নির্বাচনে আসুক। কিন্তু কে নির্বাচনে আসবে কে আসবে না, সেটি সেই দলের সিদ্ধান্ত।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তাঁর সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সংলাপ নিয়েও তারা (প্রতিনিধিদল) জিজ্ঞাসা করেনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। প্রতিনিধিদলকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার ব্যাপারে জনগণের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হবে। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরা হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিধিদলটির মূল বক্তব্য ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে পার্থক্যটি কোথায়? তিনি পার্থক্যের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলেছেন। প্রতিনিধিদলটি বিচারব্যবস্থা সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে বলে উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচনী প্রতিনিধিদলটি কোনো পরামর্শ (সাজেশন) দেয়নি বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, তারা শুনতে চেয়েছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর বিষয়টি মূল্যায়ন করতে গত শনিবার ঢাকায় আসে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন প্রতিনিধিদলটি। নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে তারা ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি আজ সচিবালয়ে প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠক করে। পরে আইন মন্ত্রণালয়ে এসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে। তবে বৈঠকের বিষয়ে প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
এদিকে বুধবার (১১ অক্টোবর) বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।
পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কারা আসবে কি আসবে না তা নিয়ে কথা হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী আমাদের নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে কি না, তাদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর জবাবে বলেছি যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা সহিংসতা মোকাবিলা করেই এতদূর এসেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ৮১ সাল পর্যন্ত দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এখন আর সেই অবস্থা নেই। আমাদের দেশের মানুষ কোনো ধরনের সংঘর্ষ চায় না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি সবাই পরীক্ষিত। নির্বাচনে ছয় লাখ আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। পুলিশ বেশি নিয়োজিত থাকবে না। তবে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও নিয়োজিত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আগের মতো দেশে আর সংঘর্ষ হবে না। উপমহাদেশের নির্বাচনগুলোতে উৎসবের মতো অবস্থা হয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতেই প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি চান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে নির্বাচন হবে। আমাদের গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীন। এখানে দুর্নীতি ও ভোট চুরি করে কেউ পার পাবে না।
খুলনা গেজেট/এইচ