খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  নিউইয়র্কে ছুরিকাঘাতে নিহত ২

সবজি চাষেই ভাগ্য ঘুরেছে হাটছালা গ্রামের ১০০ পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের হাটছালা গ্রামে এক সময় শুধু বর্ষা মৌসুমে ধান উৎপাদন হতো। লবণাক্ততার কারণে বছরের অন্যান্য মৌসুমে ফসল হতো না এখানকার মাটিতে। দিনমজুরি করেই সংসার চালাতেন অধিকাংশ দরিদ্র গ্রামবাসী । কিন্তু এখন দিন বদলেছে। হাটছালা গ্রামেই বছরব্যাপী নানা ধরনের শাক-সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। এতেই ভাগ্য ঘুরেছে ওই গ্রামের অন্তত ১০০ পরিবারের।

যদিও সবজি চাষে সেচের পানির সংকট রয়েছে তাদের। এই সংকট দূর করা সম্ভব হলে আরও ভালো ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে এখানে।

হাটছালা গ্রামের চাষীরা উৎপাদিত ফসল বিক্রি করেন স্থানীয় নকিপুর, বালিয়াডাঙ্গা ও মৌতলা বাজারে। পরে সেখান থেকেই এসব সবজি চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

প্রচণ্ড লবণাক্ততার মধ্যেও হাটছালা গ্রামে প্রায় ৩০ বছর আগে শাকসবজির চাষাবাদ শুরু করেছিলেন স্থানীয় মনোতোষ মন্ডল (৬০)। নিজবাড়ির আঙ্গিনায় বারোমাসি সবজির চাষ থেকে ধীরে ধীরে পুরো গ্রামই এখন সবুজে ভরে উঠেছে। ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছাড়াই হাটছালা গ্রামে উৎপাদিত হচ্ছে সবজি। অনেক আগে ফেরি করে হাতের শাঁখা-পলা বিক্রেতা মনোতোষ মন্ডল সবজি চাষ করেই ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। এখন তিনি ৮০ শতাংশ জমির মালিক।

একসময় হাটছালা গ্রামে সনাতন পদ্ধতিতে সবজি চাষ হলেও এখন আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করছেন কৃষকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাটছালা গ্রামের অনেক কৃষক গ্রিনহাউজ পদ্ধতির আদলে নিজস্ব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। প্লাস্টিকের স্বচ্ছ আবরণ দিয়ে ঢেকে সেখানে বোম্বাই মরিচ, টমেটো, কাঁচা মরিচ, গাজর, লালশাক, বাটিশাক, পালংশাক, ফুলকপি বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছেন। ফলে শাক সবজিতে ভরে উঠেছে ফসলের ক্ষেত।

হাটছালা গ্রামের কৃষক প্রদীপ মন্ডল জানান, দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি, ওলকপি, লালশাক, টমেটো, পালং শাক, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন তিনি। গত বছর শীত মৌসুমে সবজি বিক্রি করে আয় করেন প্রায় ৩ লাখ টাকা। এ বছর আরও বেশি লাভের আশা করছেন তিনি।

একই গ্রামের কৃষক অনুরুপা মন্ডল জানান, একসময় গ্রামগুলোয় নারীরা এতো কাজ করতেন না। তখন সামান্য ধান আবাদ হতো। সে সময় প্রায় প্রতিটি ঘরেই অভাব ছিল। এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাঠে কাজ করেন। এ কারণে ১২ মাস গ্রামগুলোয় সবজি চাষ হয়। এতে অভাবও ঘুচে গেছে এ গ্রামের চাষীদের।

একই এলাকার অনুপ কুমার মন্ডল জানান, এই গ্রামের কৃষাণ-কিষাণীরা সমানতালে কৃষি কাজ করছেন। নারীরা ক্ষেত সামলে সংসারের রান্নাসহ ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনার দায়িত্বও পালন করেন। এসময় ফসল সংগ্রহ, বাজারজাতকরণ এবং নতুন নতুন সবজি ক্ষেত তৈরিসহ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন পুরুষরা।

কৃষক মনোতোষ মণ্ডল বলেন, সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও অনেক কম। তবে সেবায় ত্রুটি করা যাবে না। কম সময়েই সবজি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় প্রতিদিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব। এছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো। সব মিলিয়ে সবজি চাষকেই আমরা লাভজনক মনে করছি। ভালো আছে অন্তত এই গ্রামের ১০০ পরিবার।

তবে তিনি জানান, জমিতে সেচের পানি নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকেন গ্রামের কৃষকরা। বৃষ্টির পানিই একমাত্র ভরসা। বৃর্ষা মৌসুমে ক্ষেতের পাশে পুকুর কেটে সংরক্ষণ করে রাখা বৃষ্টির পানিতেই সবজি চাষ করা হয়। তবে তাতে চাহিদা মেটে না। এজন্য বেশি দামে পাশের গ্রাম থেকে সেচের পানি কিনে সবজি চাষ করেন তারা।

মনোতোষ মন্ডলের মত অন্যান্য কৃষকের দাবি, সেচের পানির ব্যবস্থা হলে এ গ্রামে আরো ভালো ফসল হবে।

স্থানীয় কৃষকরা আরো জানান, গ্রামগুলোর উৎপাদিত শাক-সবজি উপজেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে এখন গ্রাম ঘুরে পাইকাররা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন জেলাসহ বিভিন্ন বড় বড় বাজারে।

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের (বর্তমান শ্যামনগর পৌরসভা) হাটছালা গ্রামে দেশি সবজি ছাড়াও লবণসহনশীল আলু চাষ হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদিত হয় হাটছালা গ্রামে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আমারা এখানকার কৃষকদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি।

খুলনা গেজেট/ এএজে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!