খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ঢাকার চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি, নিশ্চিত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মুখপাত্র
  ২০২৫ সালে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ৭৬ দিন, একটানা বন্ধ ২৮ দিন

সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে উপকূলের বাসিন্দা গোপাল মন্ডল

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে গোপাল মন্ডল। ২০০৮ সালে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে তার জন্ম। বাবা বিনয় মন্ডল একজন মৎস্যজীবী এবং মা অঞ্জলী রানী মন্ডল গৃহিনী।

দরিদ্র পরিবারের একমাত্র সন্তান গোপাল মন্ডল ছোটবেলা থেকেই অভাবের সাথে লড়াই করে বড় হয়েছে। নদীতে মাছ ধরার কাজে বাবাকে সহযোগিতা করতো গোপাল। বয়সের কারণে বর্তমানে তার বাবা কোন কাজ করতে পারে না। এজন্য তাদের অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয়।

গোপাল এক সময় স্কুলে যেত, বন্ধুদের সাথে খেলত। কিন্তু বাবার সাথে মাছ ধরতে যাওয়ার কারণে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে অভাবের কারণে বাবা-মা তাকে দাদুর বাড়ি জেলেখালী গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। সেখানেও অভাব তার পিছু ছাড়েনি। দাদু প্রতিবন্ধী, দিদিমা দিন মজুরী করে কোন রকমে সংসার চালায়। গোপাল সেখানে গিয়ে আবারও স্কুলে ভর্তি হয়। লেখাপড়ায় ভালো ছাত্র গোপাল ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিবে।

কমিউনিটি বেজড শিশু সুরক্ষা কমিটির সভাপতি ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য উৎপল জোয়াদ্দার বলেন, তিনি গোপালদের অভাবের কথা জানতেন। তাই ২০২৪ সালে এডুকো বাংলাদেশের অর্থায়নে উত্তরণ যখন কারিগরী প্রশিক্ষণ শুরু করার পরিকল্পনা করে তখন তিনি গোপাল মন্ডলকে ইলেকট্রনিক্স ও মোবাইল ফোন সার্ভিসিং প্রশিক্ষণে ভর্তি করিয়ে দেন। সে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রশিক্ষণ শেষ করে। এতে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিং সেন্টার খোলার স্বপ্ন দেখতে থাকে।

মাত্র তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে গোপাল তার দিদিমার সহযোগিতায় মাসিক ১২০০ টাকা চুক্তিতে স্থানীয় বাজারে একটা দোকান ঘর বরাদ্দ নেয়। একাজে সে একজন প্রতিবেশীর নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। বর্তমানে তার মাসে আয় হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আয় তুলনামূলক কম হলেও মনোবল অত্যন্ত মজবুত গোপালের।

গোপালের দিদিমা সাবিত্রী আওলিয়া বলেন, আমার ৩ মেয়ে, কোন ছেলে নেই। গোপাল আমার বড় মেয়ের একমাত্র ছেলে। সে আমাদের একমাত্র অবলম্বন। বর্তমানে আমরা অক্ষম, এখন গোপালই আমাদের ভরসা। সে যদি দোকান থেকে আয় করতে পারে তবে আমরা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবো। সৃষ্টিকর্তা যেন তার আয় ও আয়ু বাড়িয়ে দেয়, এটাই আমার চাওয়া।

শিশু সুরক্ষা কমিটির উপদেষ্টা ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য পলাশী রাণী বলেন, গোপাল অতিদরিদ্র পরিবারের ছেলে। সে অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী। উত্তরণের সহযোগিতায় সে মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকান দিয়েছে। এ কাজে তাদের পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে বলে আশা করেন তিনি।

গোপাল মন্ডল জানায়, উত্তরণ আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে এবং সাহস দিয়েছে। বার্ষিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করে আমি ভয়হীন ব্যবসা শুরু করেছি। আমি আশা করি একদিন এলাকার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী হতে পারবো। এজন্য সে এডুকো বাংলাদেশ এবং উত্তরণকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনি, কাশিমাড়ী ও গাবুরা ইউনিয়নে এডুকো প্রকল্পের বাস্তবায়নে চারটি ব্রিজ স্কুলে ৩৫০ জন শ্রমজীবী শিশুর শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই শিশুরা নিয়মিত ব্রিজ স্কুলে এসে লেখাপড়া করছে। এছাড়া ২০২৪ সালে ৫০ জন প্রশিক্ষাণার্থী ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল ফোন সার্ভিসিং, ইলেকট্রিক হাউজ ওয়ারিং ও সোলার সিষ্টেম এবং ইন্ডাষ্ট্রিয়াল সুইং মেশিন ও টেইলরিং বিষয়ে তিন মাসের কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ব্যবসাসহ আত্মকর্মসংস্থানমূলক বিভিন্ন কাজে যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে গোপাল মন্ডল প্রশিক্ষণ শেষে মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকন করে আয় করছে।

শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক জানান, মূলত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত স্কুল বহির্ভূত শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা। এটি দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া উপকূলীয় এলাকায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!