তালা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে “টোটাল কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম” সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে উপজেলার ২নং নগরঘাটা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের নাগরিক সেবার ধরণ। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদান করা হবে এ ওয়ার্ডের নাগরিক সেবা। এতে একদিকে যেমন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে নিয়ে বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে অপরদিকে সাধারণ মানুষ কোনরকম ভোগান্তি ছাড়াই সেবা পাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, কোন রকম ভোগান্তি ছাড়াই ডিজিটাল পদ্ধতিতে নাগরিক সেবা সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের তত্বাবধানে ২নং নগরঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা ও ২৪ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি টিম দীর্ঘ ৬ মাস নগরঘাটা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের প্রায় পাঁচ শতাধিক খানা ও (পরিবার) এক হাজার নয়শ’ আটচল্লিশ ব্যক্তির মৌলিক তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে টোটাল কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারে ইনপুট দেয়। এর পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে যে সকল দপ্তর ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সংশিষ্ট ওয়ার্ডে বিভিন্ন প্রকার সেবা প্রদান করেছে সেগুলোকে নির্ধারিত জন্মনিবন্ধন নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের বিপরীতে সংযোজন করা হয়েছে।
অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, এই সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট এলাকার সকল মানুষের নাগরিক সেবা প্রদানের রেকর্ড সংরক্ষণ থাকবে। পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, জনবান্ধব নাগরিকসেবা প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনসম্পদের ঝুঁকিহ্রাস ও কার্যকারী পদক্ষেপ নিতে ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া সামাজিক বৈষম্য হ্রাস ও এলাকা কেন্দ্রিক বিশেষ কোন চাহিদার প্রয়োজনীয়তা খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে এ সফটওয়্যার। দেশব্যাপী এ সফটওয়্যার ব্যবহার করা গেলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সামষ্টিক তথ্য নির্ভর ও নির্ভুল পরিসংখ্যান প্রস্তুত করাও সম্বব হবে। সরকারি কোন সেবা একজন ব্যক্তি অবৈধভাবে একাধিকবার পেয়েছে কিনা সেটাও উঠে আসবে।
এ ব্যাপারে সংশিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লক্ষী কান্ত সরকার বলেন, আমার এলাকার ২৪ শিক্ষিত ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একটা টিম গঠনে করে ইউএনও’র দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমার ওয়ার্ডের প্রত্যেক ব্যক্তি ও খানার (পরিবার) তথ্য সংগ্রহ করেছি। পাশাপাশি আমি নিজে পুনরায় তথ্য যাচাই-বাছাই করে ইউএনও’র কাছে জমা দিয়েছি। যা সফটওয়্যারে ইনপুট প্রদান করা হবে।
এ বিষয়ে নগরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপু জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের এই ইনোভেটিভ উদ্যোগটি আমার ৮নং ওয়ার্ডে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এটির মাধ্যমে সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর হবে। উপযুক্ত ব্যক্তিরাই সেবার আওতায় আসবে।
টোটাল কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার ব্যবহার সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, টোটাল কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যক্তির নির্ধারিত জন্মনিবন্ধন নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে সরকারি দপ্তর থেকে নেওয়া সেবার তথ্য সহজেই পাওয়া যাবে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যেসব সেবা ঐ ব্যক্তি নিয়েছে তার আপডেট তথ্যও এখানে থাকবে। এ সফটওয়্যারের সকল তথ্য প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসে হালনাগাদ করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ সফটওয়্যার ব্যবহার করে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিভিন্ন প্রকার সরকারি যোগাযোগের দ্বৈততা এড়ানো সম্ভব হবে। যেকোন দুর্যোর্গের পূর্ব মুহুর্তে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা ও জনসম্পদের ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব হবে। পাশাপশি এ সফটওয়্যার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি এটি ব্যবহারের মাধ্যমে ভোগান্তি ছাড়াই সেবা প্রদান সহজ হবে।
খুলনা গেজেট/এমএনএস