সপ্তম দিনের মতো গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি আগ্রাসন চলছে। রোববার সকালেও বিমান হামলা চালিয়েছি ইসরাইলি বাহিনী। এতে নতুন করে আরও চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ডজন খানেক। ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের কমপক্ষে দু’টি আবাসিক ভবন ধসে পড়েছে। খবর আল জাজিরার।
জেরুজালেমে কট্টর ইহুদি এবং ইসরায়েলি পুলিশের সাথে ফিলিস্তিনিদের ছোটখাটো যে সংঘাতের শুরু কয়েক সপ্তাহ আগে তা রীতিমতো এক লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। একদিকে ইসরায়েল চালাচ্ছে বিমান হামলা ও অন্যদিকে হামাস চালাচ্ছে রকেট হামলা।
ফিলিস্তিনের দাবি, ইসরায়েলের চালানো হামলায় তাদের দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের চালানো বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছে সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা ও এপির কার্যালয়। এর জেরে পশ্চিম তীরে নতুন করে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
এদিকে গতকাল আলাদাভাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন জো বাইডেন। এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে তা হলো মূলত দু’পক্ষের মধ্যে চলমান সংঘাত থামাতে তাদের সাথে কথা বলেন বাইডেন। নেতানিয়াহুর সাথে কথোপকথনে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানান বাইডেন। একইসঙ্গে বেসামরিক জনগণ ও সাংবাদিকদের জীবন রক্ষার আহ্বানও জানান তিনি।
বাইডেনের কল পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসের ওপর হামলা চলতে থাকবে।
আল-জাজিরা ও এপির কার্যালয় থাকা ভবনে হামলার পেছনে অজুহাত দিয়ে ইসরায়েল বলছে, এ ভবনের সাথে হামাসের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এপির প্রধান নির্বাহী গ্যারি প্রুইট বলছেন, এ হামলায় তিনি হতবাক হয়েছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন এর জন্য ইসরায়েল সরকার কাছ থেকে জবাব চান তিনি।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের গাজা, জেরুজালেম ও পশ্চিমতীরে শিশু ও নারীসহ বেসামরিক লোকজনের ওপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে লাখো বিক্ষোভকারী যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ইসরাইলি দূতাবাস ঘেরাও করেছেন। এ সময় তাদের হাতে ছিল ‘স্টপ বমবিং গাজা’ ও ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ এ ধরনের লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। খবর আরব নিউজের।
প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির সাবেক প্রধান জেরেমি করবিনও শনিবারের ওই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা ইসরাইলি ওই বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইহুদিবাদীদের এ মানবতাবিরোধী অপরাধ এখনই থামাতে হবে। এ জন্য যুক্তরাজ্যসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা। এ সময় প্রচুর সংখ্যক পুলিশ এসে ইসরাইলি দূতাবাসের নিরাপত্তা জোরদার করে এবং বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
বক্তারা এ সময় বলেন, ধরুন আপনার সামনে ইসরাইলিরা বোমা মেরে আপনার ভবনটি উড়িয়ে দিল, এর ভিতরে আছে আপনার সন্তান ও বাবা-মা, আপনার তখন কেমন লাগবে? ফিলিস্তিনে প্রতি মুহুর্তেই এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে ইসরাইল, আর আমরা সবাই নীরব দর্শক। এখনই এ নীরবতা ভাঙতে হবে। আসুন আমরা বর্বরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই।
পরে ওই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন লন্ডনে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হুসাম জমলট। তিনি বলেন, এখন সময়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন, এ সময় এসেছে একসঙ্গে বর্বরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ এ মহাদুর্দিনে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
উল্লেখ্য, গত ১০ মে থেকে গাজাসহ ফিলিস্তিনে ইসরাইলের নির্বিচার বোমা হামলায় ৪১ শিশুসহ দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের পাল্টা রকেট হামলায় ইসরাইেলে এক সেনা সদস্যসহ প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি