আটলান্টিকের তলায় ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পেয়েছে মার্কিন কোস্টগার্ড। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে নিখোঁজ ডুবোযান টাইটানের সন্ধানে যাওয়া কোস্টগার্ড দল এই ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পায়। তবে এই ধ্বংসাবশেষ নিখোঁজ ডুবোযানের কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
কোস্টগার্ডের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গবেষকদের পাঠানো দূর থেকে পরিচালিত হরাইজন আর্কটিকের একটি আরওভি আটলান্টিকের তলদেশে একটি ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা ওই এলাকাটি পর্যবেক্ষণ করছেন। মার্কিন কোস্টগার্ড স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে।
এক টুইটবার্তায় মার্কিন কোস্টগার্ড (নর্থইস্ট) জানায়, ‘টাইটানিকের কাছে একটি আরওভি অনুসন্ধান এলাকায় একটি ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পেয়েছে। সম্মিলিত কমান্ডের বিশেষজ্ঞরা তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন।’
আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পর্যটকদের নিয়ে রওনা হয়েছিল ডুবোযান টাইটান। গত রোববার (১৮ জুন) ৫ পর্যটকসহ সেটি নিখোঁজ হয়।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) টাইটানের ভেতরের অক্সিজেনও শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। আর অক্সিজেন থাকলেও আদৌ ডুবোযানটি অক্ষত আছে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কা আছে।
মার্কিন প্রতিষ্ঠান ওশ্যানগেট এক্সপিডিশানসের পরিচালনায় মিনিভ্যান আকৃতির ডুবোযান ‘টাইটান’ রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় অভিযান শুরু করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কানাডার কাছে আটলান্টিক মহাসাগরের এক দুর্গম এলাকায় পানির নিচে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে প্রায় ২ ঘণ্টা থাকার কথা ছিল ডু্বোযানটির।
এ সময়সীমা শেষ হওয়ার খানিক সময় আগে পানির ওপরে থাকা জাহাজের সঙ্গে ডুবোযানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডুবোযানে ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেন মজুত ছিল। এর অর্থ হলো বৃহস্পতিবার সকালের কোনো এক সময় তা ফুরিয়ে যাওয়ার কথা। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, অক্সিজেন সরবরাহ কতক্ষণ থাকবে তা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যার মধ্যে আছে ডুবোযানের জ্বালানি পরিস্থিতি এবং যাত্রীদের মানসিক অবস্থা।
বুধবার (২১ জুন) কানাডার একটি উড়োজাহাজ পানির নিচ থেকে আসা শব্দ রেকর্ড করে। মার্কিন কোস্ট গার্ড বিষয়টি নিশ্চিত করে। যার ফলে উদ্ধারদল ও টাইটানের ৫ যাত্রীর আপনজনরা আশায় বুক বাঁধেন।
পরবর্তীতে কোস্ট গার্ড আরও জানায়, রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত উদ্ধারযানকে শব্দের উৎসের কাছে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু সেখানে এখনো কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। কর্মকর্তারা আশংকা প্রকাশ করেন, রেকর্ড করা শব্দগুলো এমন কী টাইটান থেকে নাও এসে থাকতে পারে।
টাইটানের অনুসন্ধানে যে দুটি যন্ত্রচালিত ডুবোযান বা রোভ ব্যবহার করা হচ্ছিল, সেগুলোরই একটি এই ডুবোযানটি। মার্কিন কোস্টগার্ড বাহিনী জানিয়েছে, ধ্বংসাবশেষটির কোনো ছবি এখনও পাওয়া যায়নি। পাইলটসহ যে ৫ আরোহী টাইটানে ছিলেন— তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে— তা ও এখনও অজানা।
এর আগে উত্তর আটলান্টিকের যে স্থানে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের অবস্থান, তার আশপাশের এলাকায় নিখোঁজ ডুবোযান টাইটানের খোঁজে দূর নিয়ন্ত্রিত দুটি রোবট যান পৌঁছায়। পর্যটকদের পানির সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে ডুব দেওয়া টাইটানের সন্ধানে শেষ মুহূর্তের তল্লাশি চালাতে এই দুটি যান পাঠানো হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডুবোযানটি সমুদ্রতলের উপরিভাগে আছে কি না তা এখনও পরিষ্কার নয়। এর অবস্থান শনাক্ত করার জন্য কয়েক সপ্তাহের ব্যাপক পরিসরের অনুসন্ধানেরও প্রয়োজন হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।
সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালিস্টার গ্রেইগ বলেন, আমরা জানি এত গভীরে যাওয়ার মতো যান খুব কমই আছে। সাবমেরিন উদ্ধারের জন্য নৌবাহিনীর নকশা করা যানবাহন যতটা প্রয়োজন ততটা গভীরে যেতে পারে না।
ডুবোযানটির মালিকানাধীন কোম্পানি ওশানগেটের মতে, টাইটান পৃথিবীর মাত্র পাঁচটি মনুষ্যবাহী ডুবোজাহাজের একটি; যা প্রয়োজনীয় গভীরতায় পৌঁছাতে সক্ষম।
ডুবোযানটির মালিকানাধীন কোম্পানি ওশানগেটের মতে, টাইটান পৃথিবীর মাত্র পাঁচটি মনুষ্যবাহী ডুবোজাহাজের একটি; যা প্রয়োজনীয় গভীরতায় পৌঁছাতে সক্ষম।
মার্কিন নৌবাহিনীর একটি রিমোট নিয়ন্ত্রিত রোবোটিক যান রয়েছে, যা ওই গভীরতায় কাজ করতে পারে। গত বছর দক্ষিণ চীন সাগরের ১২ হাজার ৪০০ ফুট গভীরতায় তল্লাশি চালিয়ে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের অবস্থান শনাক্ত ও উদ্ধারে ব্যবহার করা হয় এই যান।
রোববার (১৮ জুন) সকালের দিকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছাকাছি যায় টাইটানকে বহনকারী জাহাজ পোলার প্রিন্স। স্থানীয় সময় রোববার ৮টায় ধ্বংসাবশেষের উদ্দশে ডুব দেয় এটি। বিকেল ৩টার মধ্যে ফিরে আসার কথা ছিল টাইটানের। কিন্তু যাত্রা শুরুর পর ৯টা ৪৫ মিনিটে টাইটানের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
খুলনা গেজেট/কেডি