খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ পৌষ, ১৪৩১ | ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকারে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫, আহত ১০
  মাদারীপুরের কালকিনিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলছে, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

সনদ বাণিজ্য : কারিগরির চেয়ারম্যান ওএসডি, স্ত্রী রিমান্ডে

গেজেট ডেস্ক

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অবৈধ সার্টিফিকেট তৈরি ও বিক্রি চক্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীন। তাকে ঘুষ দিয়েই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম করে আসছিল। টাকার বিনিময়ে এ চক্রের সদস্যদের সহায়তা করে আসছিলেন বোর্ডের কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কিছু গণমাধ্যমকর্মী। এরই মধ্যে চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের পর দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ডিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, সনদ জালিয়াতির ঘটনায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবরকে ওএসডি করা হয়েছে। তার জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বোর্ডের পরিচালক অধ্যাপক মামুন উল হককে। রোববার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আজ সোমবার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানা গেছে।

ডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, এমন অপকর্মে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান দায় এড়াতে পারেন না। মূলত তার স্ত্রীর সহযোগিতায় ভুয়া সনদ চক্র বেপরোয়া ছিল। চেয়ারম্যানকে যে কোনো সময়ে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া সনদ বিক্রি চক্রের মূলহোতা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রধান কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ (সিস্টেম অ্যানালিস্ট) প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি শুধু একাই নন, বোর্ডের আরও লোকজন এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বোর্ডের সিবিএ নেতা আব্দুল বাসেত, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামার মামুনুর রশিদ, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভোকেশনাল) জাকারিয়া আব্বাসিসহ বিভিন্ন লোকজন তাকে সার্টিফিকেটের গ্রাহক জুটিয়ে দিতেন। তাদের হাতে সনদ তৈরি করে তুলে দেওয়া হলেও টাকা পেতেন না। এ ছাড়া চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীন স্বামীর মাধ্যমে তাকে (শামসুজ্জামান) বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন সময় লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। সেহেলা পারভীনের প্রতিশ্রুতি পেয়ে তিনি নির্ভয়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে দেশব্যাপী বিভিন্ন সার্টিফিকেটপ্রত্যাশীর কাছে বিক্রি করতেন। পরে তা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিতেন।

রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যত বড় রাঘববোয়াল জড়িত থাক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আমাদের তথ্য-উপাত্তে যদি চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতা থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করব। আমরা যে কোনো সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকব।’

ডিবি লালবাগ বিভাগ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সার্টিফিকেট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত এবং বর্তমানে শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারী ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট, নম্বরপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, প্রবেশপত্র এবং জাল সার্টিফিকেট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার সদর থানা এলাকা থেকে গড়াই সার্ভে ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে। রিমান্ডে পাওয়া তথ্য, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি এবং গোয়েন্দা তদন্তে নিশ্চিত হয়ে সর্বশেষ এই চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, পলিটেকনিক, ভোকেশনালসহ বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের অনেক অসাধু কর্মকর্তা এই চক্রের কাছ থেকে নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য সনদ কিনেছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ ২৫ থেকে ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে জাল সনদ চক্রের মূলহোতা শামসুজ্জামানের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে ডিবি হেফাজতে তিনি তার কাছ থেকে কয়জন সাংবাদিক কত টাকা নিয়েছেন, তা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া অন্যান্য কর্মকর্তাও যে তার কাছ থেকে জাল সনদ নিতেন, তা বলতে শোনা যায় তাকে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!