পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হল আজ। সারা রাজ্য-জুড়ে প্রায় কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু তাদের মধ্যেই এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নজর কাড়লো সবার। পরীক্ষার দিন সকালে সন্তান প্রসব করে ওই পরীক্ষার্থী। আর সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দেয় সে। পড়াশোনার প্রতি তার এই আগ্রহ এবং পরীক্ষা দেওয়ার অদম্য ইচ্ছাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে সকলে।
ঘটনাটি মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার। হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার নানারাই গ্রামের বাসিন্দা আনজারা খাতুন(১৮)। হরিশ্চন্দ্রপুর কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল আনজারা। ওই গ্রামের যুবক মোহাম্মদ সেলিমের সঙ্গে প্রেম ছিল তার। তিন বছর আগে প্রেম করে তারা বিয়েও করে। সেই বিয়ে মেনে নেয় আনজারার বাবা আমির হোসেন। কিন্তু বিয়ের পরেও পড়াশোনা বন্ধ করেনি আনজারা।
দশম শ্রেণীতে সন্তান সম্ভবা হলেও মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডাক্তারের পক্ষ থেকে তার সন্তান প্রসবের সময় দেওয়া হয়েছিল ১৬ তারিখ। কিন্তু আজ পরীক্ষার দিন সকালেই অসহ্য প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। সকাল সাতটায় কন্যা সন্তান হয় তার। আর তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে পরীক্ষা দিতে বসে যায় আনজারা।
এই বছর তাদের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল হরিশ্চন্দ্রপুর হাইস্কুলে। আনজারার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশি পাহারায় চলছে তার পরীক্ষা। আজ প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা। পরীক্ষাতে ভালো ফলাফল করার ব্যাপারেও আশাবাদী সদ্যোজাত কন্যা সন্তানের মা আনজারা।
পরীক্ষার্থী আনজারা খাতুন বলেন, আজ সকালেই আমার কন্যা সন্তান হয়েছে। কিন্তু আজকেই আমাদের পরীক্ষা শুরু। পরীক্ষা তো দিতেই হবে। হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আশাকরি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে ভবিষ্যতে কিছু একটা করতে পারবো।
আনজারার পিতা আমির হোসেন বলেন, মেয়ে বেশ কিছু বছর আগে গ্রামেরই একটা ছেলের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করে। ভালোবাসার আগে তো কিছু নেই তাই মেয়ের বিয়ে মেনে নি। কিন্তু মেয়ে তার পরেও পড়াশোনা করত। এদিকে আজকে তার মাধ্যমিক পরীক্ষা আর আজকেই কন্যা সন্তানের জন্ম দিল। হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে মেয়ে।
হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত বি-এমও-এইচ শুভেন্দু ভক্ত বলেন, আমাদের হাসপাতালের একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভর্তি ছিল। আজ সকালে সে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। তার পরেও সে হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দিতে চেয়েছে। এই জিনিসটা খুব ভালো লেগেছে। আমরাও সমস্ত রকম ব্যবস্থাপনা করে দিয়েছি যাতে তার কোন অসুবিধা না হয়।
একথা ঠিক আনজারা পূর্ণ বয়স্কের অনেক আগেই বিয়ে করে নিয়েছিল। যদিও সম্পূর্ণটা সে নিজের মতে করে ছিল। কিন্তু তারপরেও সে যে ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার দিনই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। মা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে পাশ থেকে দেখছে সদ্যোজাত তার খুদে কন্যা সন্তান। ভালো থাকুক আনজারা এবং তার মেয়ে।
খুলনা গেজেট/ এস আই