খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ৯ মার্চ, ২০২৫

Breaking News

  ধর্ষণের মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আইন পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার : আইন উপদেষ্টা
  কোনো বাধা ছাড়া মাগুরায় শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ হাইকোর্টের, শিশুটির বড়বোনকেও নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ

সড়কে যত্রতত্র নির্মাণ সামগ্রী, দূষিত হচ্ছে বায়ূ

মুহাইমিন সৌরভ

সড়কের পাশে যত্রতত্র ইট, বালু, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রী। সামান্য বাতাস হলেই মিশে যাচ্ছে ধূলিকণা। ফলে ঘটছে বায়ূ দূষণ। শুষ্ক মৌসুমে বাতাসের সাথে ধুলা-বালি উড়ায় দুর্ভোগে পড়ছে নগর জীবন। নগরীর সব বয়সী মানুষ বায়ূ দূষণ সংক্রমণে ভূগছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) তথ্য অনুযায়ী, খুলনার বাতাস ডিসেম্বর থেকে অস্বাস্থ্যকর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাতাসে দূর্ষণের মাত্রা ১৫০ অতিক্রম করে ২০০ এর কাছাকাছি উঠানামা করছে ক্রমশ। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে নগর জীবন।

নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, দৌলতপুর নতুন রাস্তা, খালিশপুরে অবস্থিত খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতাল, বয়রা, খুলনা মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, খালিশপুর বিআইডিসি সড়ক, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, গল্লামারি, জিরোপয়েন্ট, রূপসা, ১ ও ২নং কাষ্টমঘাট এলাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব নির্মাণ সামগ্রী। এতে পথচারীদের যাতায়াতে যেমন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনই বায়ূ দূষণ হচ্ছে। এতে প্রাণীকূলের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তবে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিগগিরি অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন।

নগরবাসীর অভিযোগ, বর্তমানে খুলনা ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে মাসের পর মাস শহরের রাস্তাগুলো অচলাবস্থায় রয়েছে। ফলে রাস্তাজুড়ে জমে থাকা ধুলা পরিবেশ দূষণের মাত্রা ভয়াবহ বাড়িয়ে তুলেছে। একইসঙ্গে রাস্তার পাশে নির্মাণ সামগ্রী থাকায় ধূলিকণা ছড়িয়ে বাতাসকে দূষণ করছে। কেসিসির ৮২৩ কোটি টাকার ড্রেনেজ প্রকল্প, ৬০৭ কোটি টাকার রাস্তা উন্নয়ন কার্যক্রম এবং খুলনা ওয়াসার ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ২৫৯ কোটি টাকার শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পসহ অন্যান্য সংস্থার অতিরিক্ত প্রায় ৫০০ কোটি টাকার কাজ বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে এ সমস্যাকে তীব্রতর করেছে।

১নং কাষ্টম ঘাট এলাকার বাসিন্ধা রহমতুল্লাহ খুলনা গেজেটকে বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীরারা ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করে। চলা চলে খুবই দূর্ভোগ পোহাতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে ঘরের দরজা ও জানালা খোলা রাখা যায় না। বাচ্চাদের মার্স্ক ছাড়া বাহিরে নিতে পারি না। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর এসব বিষয়ে গুরুত্ব কম দেয়।

বয়রা মোড়ের ভ্যান চালক খায়রুল খুলনা গেজেটকে বলেন, আগে কোনো তার কোন অ্যাজমার রোগ ছিল না, কিন্তু তিনি এখন হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিনিয়ত ধুলার মধ্যে বসবাস করার কারণে আমার এই রোগ হয়েছে। যার কারণে আমার জীবিকাতেও আঘাত লেগেছে।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, শহরের বাড়ি মালিকরা রাস্তার উপর নির্মাণ সামগ্রী ফেলে দেয়। অলি-গলিতে বিক্রি করা হয় নির্মাণ সামগ্রী। যা আরও দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ওয়াসা, কেসিসি এবং কেডিএ’কে অবশ্যই তাদের সময়সূচি অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ শেষ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুলনার বায়ুর গুণমান প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর মাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। শহরে সবুজ স্থানের অভাব এবং নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে ফেলে রাখার প্রবণতা এই পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর ফলে শহরবাসীকে প্রতিনিয়ত ধূলিকণার দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এই ধূলিকণার সংস্পর্শে থাকার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন বিভাগের প্রভাষক সাধন চন্দ্র স্বর্ণকার বলেন, বায়ুদূষণ শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়। এটি জনস্বাস্থ্যেরও মারাত্মক ক্ষতি করে। এ সংকট মোকাবিলা করার জন্য, সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যার মধ্যে রয়েছে পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগ, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার, গণপরিবহন বর্ধিতকরণ এবং সচেতনতা প্রচারাভিযান।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ খুলনা গেজেটকে বলেন, সড়কের ধুলা নিবারণের জন্য কেসিসি পানির ট্যাংক দিয়ে সজ্জিত দুটি আধুনিক রোড-সুইপিং ট্রাক ব্যবহার করে। নিয়মিত ধুলো পরিষ্কার করার জন্য আমাদের আরও সুইপিং মেশিনের প্রয়োজন। এছাড়া, বাড়ির মালিকরা অসতর্কতার সাথে রাস্তায় বালু এবং অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ করে, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ সাদিকুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, নগরীতে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে নির্মান সামগ্রী ফেলে রাখার কারণে বায়ু দূষনের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমরা এখন অবৈধ ইট ভাটা গুলোতে অভিযান পরিচালনা করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে যত্রতত্র নির্মান সামগ্রী রাখার ও বিক্রির জন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!