খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ

সড়কে প্রাণহানি বাড়ছে, দায় কার

গেজেট ডেস্ক

সড়কের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটলেও তখন সব মহল থেকে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। চালক মাদকাসক্ত, গাড়ির ফিটনেস নাই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব গাড়ি চলতে দেয় কেন মোট কথা এসব নিয়ে শুরু হয় নানা বিশ্লেষণ। কয়েকদিন এই অবস্থা চলে। প্রতিদিনই কোন না কোন সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হচ্ছে। আলোচনা-সমালোচনায় শেষ। প্রতিকারও নাই। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

এই দুর্ঘটনা রুখবে কে? এর দায় কার? কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে স্বজন হারা পরিবার বিচার কিংবা কোন ক্ষতিপূরণ পায় না। এদেশে এমনই অবস্থা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে কিছু হয় না। এটা মানুষের এখন মুখেমুখে। মাদকাসক্ত অবস্থায় কিংবা ফিটনেসবিহীন গাড়ি বেপরোয়া গতিতে নিয়ম কানুন না মেনেই সড়কে চালালে দুর্ঘটনায় নিহত হলে এটা তো হত্যাকাণ্ডের সামিল। যেহেতু জেনেশুনেই ঠাণ্ডা মাথায় নিয়ম কানুন উপেক্ষা করে এই দুর্ঘটনায় মানুষকে মারা হয়েছে। আইন অনুযায়ী একই ধারায় মামলা হওয়ার কথা। কিন্তু দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এমন অবস্থা চলে তা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।

গত মঙ্গলবার ফরিদপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছে। এই দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে বুধবার সকালে ঝালকাঠি মহাসড়কে গাবখান ব্রিজের টোল প্লাজার সামনে দ্রুতগতির ট্রাক প্রাইভেটকার ও থ্রিইলারকে পিষিয়ে ফেলে। ঘটনাস্থলে ১৫ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলে। তখন নিয়ম কানুনের আলোচনা হয়। মহাসড়কে অধিকাংশ নিয়ম কানুন মানা হয় না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যেসব নিয়ম কানুন রয়েছে সেগুলো দিন দিন মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সামনে উপেক্ষিত। সড়ক নিরাপদ রাখার জন্য এতসব বিভাগ ও প্রশাসন রয়েছে কিন্তু কোটি কোটি টাকা সরকার ব্যয় করছে। তাতে সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না, বাড়ছে। এখন এসব প্রশ্নের দায় নিয়েই প্রশ্ন, তাদের কাজটি কি? এমনকি এইসব প্রশাসনের একজন কর্মচারী কোটিপতি। কর্মকর্তাদের অবস্থা কি হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের একজন কর্মক্ষম লোক নিহত বা পঙ্গু হলে ওই পরিবারে নেমে আসে চরম আর্থিক সংকট। তারা জীবিত থেকেও মৃত। ফরিদপুরের দুর্ঘটনা পরিদর্শনে যান বিআরটিএসহ একাধিক প্রশাসনের কর্মকর্তা। তারা দুর্ঘটনার কারণ বের করেন । একজন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে জানান, বাসটি চট্টগ্রাম থেকে মাগুরা চলাচল করে। এর আগে চলত বগুড়া পর্যন্ত।

এই বাসের ২০০০ সাল পর্যন্ত ফিটনেস ছিলো। এরপর আর ফিটনেস নাই। অর্থাৎ ২৪ বছর এটা ফিটনেসবিহীন চলছে। অর্থাৎ অবৈধ ভাবে এটা সড়কে চলেছে। এই বাসটি কিভাবে ২৪ বছর ধরে চলতেছে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের লোকজন কি আঙ্গুল চুষেছে এমন প্রশ্ন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের।

পিকআপ ভ্যান দিয়ে মালামাল পরিবহন করার কথা। কিন্তু যাত্রী পরিবহনের কথা নয়। তাহলে এই পিকআপ ভ্যানটি মহাসড়কে কিভাবে যাত্রী নিয়ে আসল। এই ফিটনেসবিহীন বাস ও পিকআপভ্যান দুটোই অবৈধভাবে চলাচল করে ১৫ জনের জীবন কেড়ে নিলো এর দায় কার। বিশেষ করে মহাসড়কে বাস, ট্রাকসহ বড় বড় গাড়ি যারা চালায় তাদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। এরা বিরামহীনভাবে গাড়ি চালায়। অধিকাংশ চালক আবার অভিজ্ঞ নয়। এছাড়াও চলে প্রতিযোগিতা। কার আগে কে চলবে, যেখান সেখানে গাড়ি থামিয়ে রাখে। অর্থাৎ মহাসড়কে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় গাড়ি চলাচল করছে।

এই ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে কয়েকজন চালককে প্রশ্ন করা হলে তারা ইত্তেফাককে বলেন, শুধু মহাসড়কে নয় রাজধানীসহ নানা সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালাতে পুলিশসহ বিভিন্ন লোকজনকে ঘুষ দেই। যার বিনিময়ে আমরা নিরাপদে গাড়ি চালাচ্ছি।

২০১৯ সালে হাইকোর্ট থেকে এক নির্দেশনা দেওয়া হয় চালকদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক। এই ডোপ টেস্ট করতে গিয়েও চালকরা নানা হয়রানির শিকার হয়। নিয়ম অনুযায়ী করতে গেলে ৬/৭ মাস সময় লাগে। তাই অধিকাংশ চালক দালালের মাধ্যমে ডোপ টেস্টের সার্টিফিকেট পেয়ে থাকে। দালালদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে একদিনের মধ্যে সার্টিফিকেট তৈরি করে দেয়।

হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান বলেন, মহাসড়ক হলো ২২ হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ ৩০০০ কিলোমিটার দেখে। বাকি ১৯ হাজার কিলোমিটার দেখে জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ। আমাদের হাইওয়ে পুলিশের যানবাহন ও জনবল সংখ্যা কম। এরপরেও ঈদে যানবাহন চলাচল নিরাপদে রাখা হয়েছে। ঈদের আগে ও পরে কোন দুর্ঘটনা ঘটে নাই। মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করেছে। সড়ককে নিরাপদ রাখার জন্য আমরা সকল ব্যবস্থা নিয়েছি। গত বছর মামলা করে ৬৮ কোটি টাকা সরকারকে দেওয়া হয়েছে। তবে সড়কে নিরাপত্তার জন্য সকলের সহযোগিতার দরকার। মালিক, চালকসহ প্রশাসনের লোকজন সমন্বিতভাবে সহযোগিতা করলে সড়ককে নিরাপদ রাখা সম্ভব।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, মহাসড়ককে নিরাপদে রাখার একটাই সমাধান। বিশৃঙ্খলাকে শৃঙ্খলায় আনতে হবে। কিন্তু হাইওয়েকে নিরাপদ ও শৃঙ্খলায় রাখার জন্য আলাদা হাইওয়ে পুলিশ গঠন করা হয়। এমনকি আলাদা অর্গানোগ্রাম করে দেওয়া হয়। যাদের দায়িত্ব পালনের কথা তারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে তাহলে দুর্ঘটনা ঘটবেই। ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানেও পাল্টা দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। আর হাইওয়েতে অবৈধভাবে গাড়ি থামানো হয়। সেখানে একটা অবৈধ স্টপেজ হয়ে যায়। সেখানেও গাড়ি রাখার প্রতিযোগিতা চলে। এই প্রতিযোগিতা বন্ধ না করলে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তারপরে বিআরটিএতে রেজিস্ট্রেশনের নামে টাকা নেওয়া হয়। বৈধভাবে গাড়ি চলাচলের জন্য বিআরটিএ লাইসেন্স দিয়ে থাকে। তাহলে টাকা নিয়ে যদি লাইসেন্সই দেওয়া হয় তাহলে কেন বৈধভাবে গাড়ি চলবে না। যদি এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় তাহলে সংসদীয় কমিটি কারণ নির্ণয় করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে। মোট কথা এই বির্শঙ্খলাকে শৃঙ্খলায় আনা না গেলে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!