দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে সকল ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ পেল সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। শুধুমাত্র গুঁড়া দুধ ব্যতীত সকল পণ্য আমদানির এই অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনার দায়িত্বকালে এই বন্দর দিয়ে সকল প্রকার পণ্য আমদানির অনুমতি পাওয়ায় বেজায় খুশি আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। বন্দরের এই খুশির খবরে আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) একটি আনন্দ র্যালি ও পথসভা করবে বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী বন্দর হওয়া স্বত্বে সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ ছিল না এই বন্দর দিয়ে। ফলে অনেক ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর ব্যবহারে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। ভোমরা বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে দীর্ঘদন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ি সংগঠনসহ বন্দর ব্যবহারকারি সংশ্লিষ্টরা। এজন্য বহুদিনের প্রতীক্ষিত প্রত্যাশায় বুক বেঁধে ছিল ব্যবসায়ীরা। অবশেষে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী দুঃশাসন অবসানের পর নুতন করে আলোর মুখ দেখল ভোমরা স্থলবন্দর। অর্ন্তরবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর শুধুমাত্র গুঁড়া দুধ ব্যতীত সকল পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর।
বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোমরা বন্দরের আমদানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ আর রাজস্ব প্রবৃদ্ধি গতিশীল করার লক্ষ্যে ২৭ আগস্ট অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এস.আর.ও. নম্বর ২৯৭-আইন /২০২৪/৮৯ কাস্টমস আইন ২০২৩ সনের ৫৭নং আইন এর ধারা ৮ এর উপধারা-১ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতৃক অনুমোদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে, গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর, স্টোন এন্ড বিল্ডার্স, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে, ব্যবহার্য কাঁচাতোলা, চাল, মসুর ডাল, কোয়ার্টজ, তাজাফুল, খৈল, গমের ভূসি, ভুট্টা, চালের গুড়া, সয়াবিন কেক, শুটকিমাছ, (প্যাকেটজাত ব্যতীত), হলুদ, জীবন্ত মাছ, হিমায়িত মাছ, পান, মেথি মাছ, চিনি, মসলা, জিরা, মোটর পার্টস, স্টেইন লেস স্টিলওয়্যার, রেডিও, টিভি পার্টস, মার্বেল স্লাব, তামাক ডাটা (প্রতিষ্ঠিত মূসক নিবন্ধিত বিড়ি উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাঁচামাল হিসেবে আমদানীয়), শুকনা তেঁতুল, ফিটকিরি, এ্যালুমিনিয়ামের টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যার, আগরবাতি, জুতার সোল, শুকনা কুল, ফ্লাই অ্যাশ, তাজা ও শুকনা ফলমূল, সকল প্রকার তাজা সবজি, শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ, ধনে, সকল প্রকার খৈল,ফায়ার ক্লে, থান ক্লে স্যান্ডস্টোন, মার্বেল চিপস, ডলোমাইট, ফ্লোগোফাইট, ট্যালক, পটাশফেলসপার, গ্রানুলেটেড স্লাগ, সোডা পাউডার, তিল, সরিষা, রেডিমেড গার্মেন্টস, ইমিটেশন জুয়েলারি, সুপারি, হার্ডওয়ার, গ্রানাইট স্লাব, তুলা, সুতা, গাড়ির চ্যাসিস, প্রকল্পের যন্ত্রপাতি, কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, কিসমিস, এলাচ, গোল মরিচ, লবঙ্গ, বিট লবণ, তেঁতুলের বিচি ও জিপসাম।
এদিকে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে সকল পণ্য আমদানির অনুমতির সুখবর এখন ব্যবসায়ীদের মুখে মুখে। খুশির খবরে আজ বুধবার সকাল ১০টায় ভোমরা কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের নবগঠিত এডহক কমিটির উদ্যোগে বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল সিএন্ডএফ এজেন্ট, শ্রমিক সংগঠন সিএন্ডএফ কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশন, আমদানি রপ্তানি কারক এ্যাসোসিয়েশন এবং সকল ট্রান্সপোর্ট সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বের করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভোমরা সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের এডহক কমিটির সদস্য সচিব আলহাজ্ব মোহাম্মদ অহিদুল ইসলাম বলেন, বর্ণাঢ্য এ আনন্দ র্যালির নেতৃত্ব দিবেন এডহক কমিটির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব। আনন্দঘন মুহুর্তে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালিটি সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্মুখস্থ বন্দর সড়ক দিয়ে বের হয়ে বন্দর এলাকা পরিদর্শন শেষে শুল্ক স্টেশন সংলগ্ন সড়কে এসে শেষ হবে। এখানে এক পথ সভায় বক্তব্য রাখবেন সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
খুলনা গেজেট/এনএম