খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা (ইউআরপি) ডিসিপ্লিন এবং সুইজারল্যান্ডের সেন্ট গ্যালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ‘বাংলাদেশের নগর উন্নয়নে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের ভূমিকা’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী কর্মশালার সমাপনী দিনে বিষয়ভিত্তিক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস’র ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স অফিসের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেটের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। দিন দিন মানুষের আবাসিক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে রিয়েল এস্টেটের প্রতি মধ্যবিত্তরা আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে বাংলাদেশে নগরায়ন ও অর্থনীতির উন্নয়নও হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার পরে চট্টগ্রামেও রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররা অনেক স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। খুলনায়ও কয়েকটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান কাজ করছেন। তবে এখনো বৃহদাকারে তারা নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, সকলের জন্য বাসযোগ্য নগর গড়ে তুলতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে- রিয়েল এস্টেট আর ভূমি ব্যবস্থাপনা এক না, তবে একে অন্যের পরিপূরক। তবে এই বিষয়ে বিশেষায়িতভাবে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এজন্য ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করতে খুলনায় একটি ইনস্টিটিউট হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমি সংশ্লিষ্ট মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি এই বিষয়ে গবেষণার জন্য রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদেরও এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি।
উপাচার্য বলেন, ভবন করার সময় অনেক বিষয়ই আমলে নেওয়া হয় না। বিশেষ করে ওই এলাকার ভূমির গঠন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সুবিধা, সড়ক প্রশস্তকরণের সুবিধা ইত্যাদি। এসব কারণে পরিকল্পিত নগরায়নে বিঘ্ন ঘটছে। কিছু মানুষের ওভারল্যাপিংয়ের কারণে শহর স্বাভাবিক চরিত্র হারাচ্ছে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আলোকে শহরকে গড়ে তুলতে একাডেমিশিয়ানদের সাথে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের কাজ করা উচিত।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ। তিনি বলেন, একটি শহর সুস্থ না অসুস্থ তা বোঝা যায়, তার বর্জ্য ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা দেখে। পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য ল্যান্ড ও সয়েল স্ট্র্যাকচারের পাশাপাশি ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত হওয়া প্রয়োজন। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল প্রয়োজন, খুলনা শহরে খাল থাকলেও তা ভরাট করে দখল করে রাখা হয়। এতে শহরের মধ্যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ছাড়াও ড্রেনে পানি জমে পরিবেশ দূষণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কোনো ভবন নির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার পাশাপাশি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। যাতে ভবন নির্মাণের ফলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় কিনা, জরুরি মুহূর্তে যানবাহন প্রবেশের স্পেস পাওয়া যাবে কি না, ভূমি ও মাটির গঠন ভবন করার উপযোগী কি না- ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তিনি সকলকে নিয়ে সুন্দরভাবে বসবাস করতে ও সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে নগর পরিকল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে ‘বাংলাদেশের নগর উন্নয়নে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের ভূমিকা’ শীর্ষক গবেষণা তুলে ধরেন সুইজারল্যান্ডের সেন্ট গ্যালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ও আইএইচএস’র নবনিযুক্ত প্রজেক্ট এন্ড পার্টনারশিপের প্রধান ড. অ্যান্থনি বনাডা-ফাচস। তিনি খুলনার নগর উন্নয়ন কাঠামোর মধ্যে রিয়েল এস্টেট সেক্টরের অবদান এবং চ্যালেঞ্জের উপর আলোচনা করেন। খুলনা শহরের পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার উপর সমালোচনামূলক মূল্যায়ন তুলে ধরেন ইউআরপি ডিসিপ্লিনের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ও উপমা। তিন দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে মতামত তুলে ধরেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউআরপি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. ফৌজিয়া ফারজানা ও স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের এস এম নাজিমুদ্দিন।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য রাখেন এবং সঞ্চালনা করেন ইউআরপি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. আশিক উর রহমান। সূচনা বক্তব্যে তিনি খুলনা শহরের ভবিষ্যৎ নগর পরিকল্পনা এবং রিয়েল এস্টেট উদ্যোগের বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন।
তিন দিনব্যাপী এ কর্মশালায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিসহ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
খুলনা গেজেট/এএজে