ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটি গভীর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এক্ষেত্রে সুফিবাদী ও ভক্তিবাদী আন্দোলন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ধর্ম-কর্ম করলেও সুফিবাদী বা ভক্তিবাদীদের অনাড়ম্বর জীবন-যাপন, নির্লোভ চরিত্র ও সুমিষ্ট ব্যবহার সব সম্প্রদায়ের মানুষকে আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে।
উপমহাদেশের পীর-ফকির-আউলিয়া-দরবেশ-সাধু-সন্ন্যাসী-বৈষ্ণবদের দরবার এবং আখড়া আজ হয়ে উঠেছে সহাবস্হান ও সমন্বয়ের মিলনভূমি। সব সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে মিলিত হয়। আবার আমাদের এই বাংলা অর্থ্যাৎ অবিভক্ত বাংলা আউল-বাউল-ফকির-দরবেশ-সাধু-সন্ন্যাসীদের দেশ। মোগল সম্রাট আকবরের বড় ছেলে শাহাজাদা দারাশুকো ভারতীয় উপমহাদেশের রুপ দেখে লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্হ ‘মাজবাইন বাহারিন’, যার অর্থ ‘দুই সাগরের মধ্যবর্তী স্হান’। হ্যাঁ ভারতবর্ষ (অবিভক্ত ভারত) বহু সভ্যতা ও সংস্কৃতির মিলনভূমি।সুফিবাদ ও ভক্তিবাদের ধারা এই মিলনভূমি রচনা করেছে যা আজো চলমান।
‘সুফি’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘সাফা’ শব্দ থেকে। যার অর্থ হল ছাদ। এক ছাতার মধ্যেই অবস্হানই হল তার লক্ষ্য, তা সে ধর্মের লোকই হোন না কেন। ইসলামে শরিয়ত, হকিকত, তরিকত ও মারেফাত এই চারটি দিক। সুফিবাদী তিনটি স্তরকে অতিক্রম করে মারেফাত তত্বে আসেন। তাই সুফিবাদ শান্তি-ভালোবাসা ও এক তাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। একইভাবে ভক্তিবাদীরা সনাতন ধর্মের গার্হস্হ্য, বানপ্রস্থ, ব্রম্ভচর্য ও সন্ন্যাস-সাধনার চারটি দিক।
ভক্তিবাদীরা সন্নাসে উত্তীর্ণ। এরা শান্তি-ভালোবাসা ও কতার সমর্থক। এই ভারতবর্ষ বা বাংলার মাটিতে যুগে যুগে এসেছেন নিজামুদ্দীন আউলিয়া, আমীর খসরু, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি, ফুরফুরা শরীফের হজরত আবু বকর সিদ্দিকী (রহ:), সিলেটের পীর হজরত শাহজালাল, চট্টগ্রামের বায়জিদ বুস্তামি ও আমানত শাহ, রাজশাহীর মখদুম শাহ, উত্তর চব্বিশ পরগনার পীর গোরাচাঁদ, সুন্দরবনের বনবিবি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ঘুঠিয়ারী শরীফের ইসলাম খাঁ, বীরভূমের পাথরচাপুড়ির দাতা মহবুব শাহ, কলকাতার সুফি ফতেহ আলী ভয়েসি, মৌলা আলি শাহ, পালোয়ান বাবা উল্লেখযোগ্য।
আবার ভক্তিবাদী হিসাবে সাধক হিসাবে নানক, কবির, ফকির লালন শাহ, মহাপ্রভু চৈতন্যদেব, বামা খ্যাপা, যবন হরি দাস, অদৈতাচার্য, গৌতম বুদ্ধ।আজকে কাশ্মীর জাহান্নামে পরিণত হলেও এই কাশ্মীরকে ভূস্বর্গে পরিণত করেছিলেন সুফিসাধকরাই। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সুফি সাধক- সন্নাসী-ফকির-আউল-বাউলদের খুব গুরুত্ব দেয়।
তাই চলতি বছরের ৯ আগস্ট দিল্লির ইসলামিক কালচার সেন্টারে সুফি সম্মেলনে ঐতিহাসিক বক্তব্যে বলেন, ভারতীয় সভ্যতা- সংস্কৃতি সুফি সাধক ও ভক্তিবাদীরা সংহতি-ঐক্য ও সম্প্রীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তাদের মরমী চেতনার দ্বারা। ঐ সম্মেলনে উপমহাদেশের প্রতিটি দেশের সুফি সাধক ও সন্ন্যাসীরা আসেন।
খুলনা গেজেট/এনএম