খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী ইউনিয়নের পাতড়াবুনিয়া সড়কটি সংস্কার অভাবে দীর্ঘ দিন যাবত চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এলাকাবসী। মিনহাজ নদী তীরবর্তী প্রায় দু’ কিলোমিটারের এ সড়কটির অধিকাংশই কাঁচা, বকি অংশে ইটের সোলিং থাকলেও গাইডওয়ালের অভাবে তা নদীতে ধষে পড়েছে। কোথাও কোথাও আবার রাস্তাটি ভেঙে কৃষি জমির আইলের ন্যায় হয়ে পড়ায় যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচল করাটাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা গুরুত্বপূর্ন ওই সড়কটির সংস্কারে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বুধবার স্থানীয়দের সাথে কথাবলে জানাযায়, সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলার দ্বীপবেষ্টিত ইউনিয়ন গড়ইখালী কৃষি ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে উপজেলার অন্যান্য এলাকার তুলনায় গড়ইখালী যেন বহুলাংশে পিছিয়ে রয়েছে। এর কারণ হিসেবেও আবার ওই এলাকার মানুষ অনুন্নত সড়ক-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। এমনকি অনুন্নত রাস্তা-ঘাটই উপজেলা সদরের সাথে গড়ইখালী ইউনিয়নবাসীর দূরত্ব সৃষ্টি করেছে বলেও দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখাযায়, গড়ইখালীর মিনহাজ বাজার সংলগ্ন বটতলা থেকে মিনহাজ নদীর পাড় ঘেষে বগুড়ারচক, পাতড়াবুনিয়া ও চৌমহনী হয়ে গজালিয়া চৌরাস্তা মোড় থেকে পাইকগাছা-কয়রা প্রধান সড়কের সাথে যুক্ত হয়ে সরাসরি উপজেলা সদরে যাতায়াতে একটি মাত্র সড়ক রয়েছে। সড়কটির মিনহাজ বটতলা থেকে জনৈক এনামুল হকের বাড়ি পর্যন্ত পাকা। এরপর বগুড়ারচক বাজার পর্যন্ত কার্পেটিং ও তারপর জনৈক মালেক গাজীর বাড়ি পর্য়ন্ত পাকা। এরপর সেখান থেকে চৌমুহনী বাজার পর্যন্ত প্রায় দু’ কি: মি: রাস্তা সম্পূর্ন কাঁচা (মাটির)। তবে ইটের সোলিংটিতেও গাইডওয়ালের অভাবে রাস্তাটি জায়গায় জায়গায় ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও আবার কৃষি জমির আইলের ন্যায় হয়ে যাওয়ায় যানবাহনসহ হেঁটে চলাচলও দুরূহ হয়ে পড়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির এমন পরিস্থিতে চরম দুর্ভোগে রয়েছে স্থানীয় সর্বোসাধারণ।
স্থানীয়রা জানান, বগুড়ারচক স: প্রা: বিদ্যালয়, বগুড়ারচক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাতড়াবুনিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও বঙ্গবন্ধু মহিলা মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীরা এ সড়কটি দিয়েই যাতায়াত করে। তবে দীর্ঘদিন সংস্কার অভাবে রাস্তাটির বেহাল দশায় রীতিমত বিপাকে পড়েছেন স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরাসহ সাধারণ মানুষ।
এব্যাপারে স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবকরা জানান, আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে সড়কটির সংস্কার করা না গেলে ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিতে হবে। কেননা বর্ষা মৌসুমে নদীতে ¯্রােত বেশি থাকে । আর রাস্তার পাশেই নদী। তাই বড় কোন ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে শিক্ষাপ্রাতিষ্ঠানে ছেলে মেয়েদের পাঠানো বন্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না তাদের!
পাতড়াবুনিয়া এলাকার আব্দুর রশিদ তরফদার নামের এক ব্যক্তি জানান, এই অঞ্চলে এখন পর্যন্ত যারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন কেউ কথা রাখেননি। ভোটের আগে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা দিলেও ভোটের পর আর কেউ কথা রাখেন না। ফলে যুগের পর যুগ পেরোলেও রাস্তা নিয়ে তাদের দুর্দশা ফুরায় না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম কেরু জানান, সড়কটি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ন বিবেচনায় অন্যতম। সড়কটির সংস্কার তথা উন্নয়ন করা গেলে উপজেলা সদরের সাথে গড়ইখালীর সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নতি হবে। এতে করে সর্বোসাধারণের যেমন দুর্ভোগ লাঘব হবে তেমনি কৃষি ক্ষেত্রেও আরও উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সড়কটির সংস্কার তথা উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান খান বলেন, সড়কটির উন্নয়নে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সর্বশেষ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিু তথা দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবে সড়কটির উন্নয়নে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ঠ কর্তূৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন গড়ইখালীর সর্বোস্তরের মানুষ।
খুলনা গেজেট/ এসজেড