দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনার বিচার হবে জানিয়ে সংসদ সদস্যদের প্রতি অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার অনুরোধ থাকবে মাননীয় সংসদ সদস্যরা যেন এই ধরনের অপরাধীদের কখনো রক্ষা করার চেষ্টা না করেন। অপরাধ যে করে এবং অপরাধীকে যারা রক্ষা করে তারা সমানভাবে দোষী।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্ব) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন উত্তর পর্বে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের করা এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ইউএনওর সাথে যে ঘটনা ঘটে গেছে সেটা তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে যে আসলে বিষয়টা কি। কিছু কিছু জায়গায় বলা হচ্ছে চুরি করার জন্য। সেখানে আরো কি কি ঘটনা থাকতে পারে সেগুলো কিন্তু যথাযথভাবে দেখা হচ্ছে। তাকে হেলিকপ্টারে করে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা কিন্তু আমরা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি অপরাধী কিন্তু আমার চোখে অপরাধী। সে কোন দল, কে, কি আমি কিন্তু সেটা বিচার করি না। সেটা আপনারা দেখেছেন। আমি অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখি। সেখানে যদি আমার দলেরও লোক হয়, সমর্থকও হয়, তাকেও আমি ছাড়ছিনা, ছাড়ব না। এটা হলো আমার নীতি এবং সেই নীতি নিয়ে আমি চলছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময়ে আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারী প্রত্যেকে আমাদের প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি, পুলিশ বাহিনী এবং আমাদের দলের নেতাকর্মী আমাদের ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ আন্তরিকতার সঙ্গে মাঠে কাজ করেছে। এই কাজ করতে গিয়ে আমাদের বহু নেতাকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছে, অনেকেই মারা গেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটার পর একটা ধাক্কা আসল। করোনাভাইরাস এই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে সেই ঘূর্ণিঝড় আম্পান। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ২৪ লাখ মানুষকে আমরা সরিয়ে তাদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। আম্পানের ধাক্কা না কাটতে কাটতে আসলো বন্যা। সেই বন্যা মোকাবেলা করা এবং এই প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের ত্রাণ দেয়া, তাদের সাহায্য করা- এটা কিন্তু সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে করেছে।’
এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির একজন সংসদ সদস্য বলেছেন, অতীত টেনে কথা বলি কেন? অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনের চলার পথ নির্দিষ্ট করতে হয়। তা না হলে শিক্ষা হয় না। সেই কারণেই অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হয়। এখানে অতীত নিয়ে কথা না, একানব্বই সালের কথা আমি বলেছি, সেই ঘূর্ণিঝড়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো দেখেছি কত অবহেলার শিকার হয়েছিল এ দেশের মানুষ, ঠিক সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের পর যেমন মানুষ অবহেলিত ছিল। সেই সময় আমরা বিরোধী দলে থেকে আমরাই সেই দুর্গত মানুষের পাশে দাড়িয়েছিলাম। তারপর সরকার গিয়েছিল, সরকারতো তখন ঘুমাচ্ছিল। আর এই পার্লামেন্টে তারা বলেছিল যত মানুষ মরার কথা ছিল ততো মানুষ মরে নাই। এটা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল। এইটা হল দুর্ভাগ্য। অতীতকে স্মরণ করতে হবে, সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তাহলেই আমরা আগামী দিনের পথ চলতে পারব।’