ভারতে আইন পাস হওয়ার চার বছর পর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হয়ে গেল। লোকসভা ভোটের তফসিল ঘোষণার আগেই সোমবার (১ে১ মার্চ) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। গত চার বছর নিয়ম করে ওই আইনের নিয়মবিধি তৈরির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সময় বাড়িয়ে আসছিল।
২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার এই আইন পাস করেছিল। আইনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সিধর্মীয় সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছেন, এ আইনে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। চার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আইনটি সারা দেশে চালু হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করার ফলে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকেই ওই তিন দেশ থেকে ভারতে আসা বাসিন্দারা নাগরিকত্ব পেতে আবেদন জানাতে পারবেন। আবেদন করতে হবে অনলাইনে।
পশ্চিমবঙ্গে এই আইনের ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও বলেছেন, রাজ্যে কিছুতেই সিএএ চালু হতে দেবেন না তিনি।
প্রথম থেকেই এই আইনের বিরোধিতা হয়ে আসছে প্রবলভাবে। আইনটি পাস হওয়ার সময় দিল্লিতে দীর্ঘদিন অবরোধ চলেছে। দাঙ্গাও হয়েছ। সারা ভারতে প্রতিবাদ হয়েছে। প্রতিরোধও হয়েছে। সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। এবারও বিক্ষোভ–সহিংসতা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা ভারতের সব জেলার পুলিশ প্রশাসনকে সতর্ক করে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, আগেরবারের মতো জেলায় জেলায় যেন ঝামেলা না হয়।
এই আইনের বিরোধিতাকারীদের অভিযোগ, আইনটি ভারতের সংবিধানের পরিপন্থী। কেননা, এই আইনে ধর্মীয় কারণে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য করা হচ্ছে। বিজেপির বক্তব্য, এই আইনে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না। যাঁরা ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে এ দেশে চলে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
বিতর্কিত এই আইন ভারতে তো বটেই, বিদেশেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করার সময় স্থানীয় এক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি না, ভারত কেন এটা করল। এই আইনের কোনো প্রয়োজনই ছিল না।’
সিএএর ঠিক আগে আসামে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল,অবৈধভাবে ঢোকা বিদেশিদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো। কিন্তু রিপোর্ট পেশের পর দেখা যায়, রাজ্যে মুসলমানের চেয়ে হিন্দু অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বেশি। তখন থেকেই আসামে এনআরসির রূপায়ন বাতিল হয়ে যায়। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০১৯ সালে বলেছিলেন, ‘এক–দুই করে বলছি, প্রথমে নাগরিকত্ব বিল আনা হবে। তা পাস করা হবে। ধর্মীয় কারণে তিন দেশ থেকে চলে আসা সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তারপর এনআরসি হবে এবং সেটা হবে সারা দেশের জন্য।’
অমিত শাহ গত ১০ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিলেন যে লোকসভা ভোটের আগেই সিএএ কার্যকর করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। সেটাই করা হলো সোমবার।
খুলনা গেজেট/কেডি