খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে চায় সুজন

গেজেট ডেস্ক

রাজনৈতিক দলের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে ফিরিয়ে আনতে হবে। বৃহস্পতিবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বক্তারা।

একই সঙ্গে তারা ভবিষ্যতে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা রোধে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা চালু, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন ও সংসদ নির্বাচনে দলীয় ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চালুর পরামর্শ দেন।

রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনের আজিজুর রহমান সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘গণতন্ত্র ছাড়া আমাদের উপায় নেই। কিছুকাল পরপর স্বৈরশাসক আসবে আর তাকে তাড়াতে সাধারণ মানুষ প্রাণ দেবে, রক্ত দেবে– এটা হতে পারে না। এবারের আন্দোলনেই যেন এই রীতি চিরতরে শেষ হয়ে যায়।’ কে স্বৈরাচার না– সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক করার এটিই সুযোগ। দলগুলোকে জোর করে হলেও গণতান্ত্রিক চর্চা করানোর চেষ্টা করতে হবে।’

মনোনয়ন প্রথা তুলে দিতে পারলে ৮০ শতাংশ দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করে সাবেক বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব দিতে হবে। জনগণ প্রার্থীকে নয়, দলকে ভোট দেবে। যতদিন মনোনয়ন প্রথা থাকবে, ততদিন দুর্নীতি বন্ধ হবে না।’

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার অনুষ্ঠান সঞ্চালনাকালে বলেন, ‘আমরা ছাত্র রাজনীতি চাই, তবে লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি চাই না।’ একতরফা নির্বাচন কোনো নির্বাচন নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন মানেই বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। ভবিষ্যতে যাতে একতরফা নির্বাচন হতে না পারে, সেজন্য দশম জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে হাইকোর্টে যে রিট দাখিল করা হয়েছিল, সেটির ব্যাপারে রিভিউ আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘কত শতাংশ ভোট না পড়লে সেই নির্বাচন বাতিল হবে, তা নির্ধারণ করা যেতে পারে। কারণ বর্তমানে এক শতাংশ ভোট পেলেও জনপ্রতিনিধি হতে বাধা নেই।’ তিনি ভোটের আনুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তন এবং দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার তাগিদ দেন।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি কীভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকা প্রয়োজন। তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেই কেউ তাদের ইচ্ছামতো আইন পাস করতে পারবে না। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে মনে করে, এটা করতে চায় না।’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অনেক সময় মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে কোনো দল ৬০ শতাংশ বা তার বেশি আসনে জয়ী হয়ে সরকারে যায়। তারা ৭০ শতাংশ মানুষকে শাসন করে। এই পদ্ধতির পরিবর্তন করে নির্বাচিত হতে অন্তত ৫১ শতাংশ ভোট পাওয়ার নিয়ম করা প্রয়োজন।’

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেই বারবার গণঅভ্যুত্থান করতে হচ্ছে। প্রশাসন তত্ত্বাবধায়কের সময় তিন মাস নিরপেক্ষ থাকতে পারলেও বাকি চার বছর ৯ মাস নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারছে না।’ রাজনৈতিক দলগুলো যদি গণতান্ত্রিক না হয়, তাহলে এই আলোচনা নিষ্ফল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল দেশ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস সংসদ ৩০০ আসনে সীমাবদ্ধ না রেখে এই সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা জেসমিন টুলি বলেন, ‘গত ৫৩ বছরে ১২টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচনই কেবল তুলনামূলক স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।’ অন্যায় করে পার পাওয়ার একটা রীতি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পথ সংকুচিত করতে হবে। তাহলে প্রত্যাশিত পরিবর্তন আসবে।’

ফেমার সভাপ্রধান মনিরা খান বলেন, ‘জনগণের কাছে নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উপায় বের করতে হবে। প্রয়োজনে জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।’

নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ওপর জোর দেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আবদুল আলিম।

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ফয়েজ আহমদ তৈয়ব বলেন, ‘ভোটার তালিকা ডিজিটালাইজড করতে হবে। পাশাপাশি ফলাফল ঘোষণার জন্যও সফটওয়্যার দরকার।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যমান ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। নতুন প্রস্তাবনা আনতে হবে। বিজয়ীদের যেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

বৈঠকে লিখিত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। নির্ধারিত বক্তাদের আলোচনার পর মুক্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে আয়োজনটি শেষ হয়।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!