খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
  নরসিংদীতে ব্যাডমিন্টন খেলার সময় যুবককে গুলি করে হত্যা
  ঘন কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ যানবাহনের সংঘর্ষ, নিহত ১, আহত ১৫
  ব্রাজিলে দুর্ঘটনায় বাসে আগুন, পুড়ে নিহত ৩৮

সংবাদপত্রের পাতায় কমরেড রতন সেন

কাজী মোতাহার রহমান

যৌবনে তিনি শিক্ষকতা পেশার সাথে সম্পৃক্ত হন। বটিয়াঘাটা উপজেলার বিশ্বম্ভর বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৪৫ সাল, তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনামল। তার আগ থেকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত। খেটে খাওয়া মানুষের ভাত-কাপড়ের জন্যই মূলতঃ তার রাজনীতি। তিনি মার্কসবাদী দর্শনে বিশ্বাসী। শ্রেণিহীন-শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। উৎপাদনের সুষ্ঠু বন্ঠন প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। কৃষক রাজ-শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠাই তার লক্ষ্য। তিনি মার্কসবাদী দর্শন বাস্তবায়নের নেপথ্যের সংগঠক। মাঠে, ময়দানে, মিছিল, পথসভা ও জনসভায় বক্তৃতা করতেন না। আম জনতার কাছে তার তেমন পরিচিতি ছিল না।

১৯ বছর বয়সে অবিভক্ত ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। বৃটিশ তখন এদেশের শাসক। শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তৃণমূলে কাজ শুরু করেন। সেই থেকেই মার্কসবাদী চিন্তা চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন।

পাকিস্তানের স্বাধীনতার পূর্বে কমিউনিস্ট পার্টির দর্শন দলের কর্মী ও সমর্থকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য স্বাধীনতা নামে পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তখন রোববার ছুটির দিন। তিনি প্রত্রিকাটি সমর্থকদের কাছে পৌঁছে দিতেন। আন্দোলন-সংগ্রাম ও দলকে সংগঠিত করার পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখতেন। বাম রাজনীতির ওপর তিনি প্রজ্ঞা সম্পন্ন। সিপিবির মূখপাত্র সাপ্তাহিক একতা, মুক্তির দিগন্ত ও স্বাধীনতা পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধ লিখতেন। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধের শিরোনাম জাতীয় মুক্তি গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ (মুক্তির দিগন্ত, ১৯৮৭ ডিসেম্বর) বামপন্থীদের ঐক্য-অনৈক্য প্রসঙ্গ (সাপ্তাহিক একতা, ১৯৮৫ সাল ৩ মে), বর্তমান আন্দোলন সাফল্যের জন্য যা প্রয়োজন (একতা, ৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫), লেলিন কেন আমাদের আপন জন (একতা, ১৯ এপ্রিল ১৯৮৫), সমাজতান্ত্রিক চেতনা, শ্রমজীবি ও বুদ্ধিজীবী (১৯৮৭ সালের ১৭ জুলাই), অক্টোবর বিপ্লবের ৭০ বছর এবং আমাদের সমাজতন্ত্র (একতা, ৬ নভেম্বর ১৯৮৭), সাম্রাজ্যবাদে পুলিশী ভূমিকা এ আমাদের পাঁচ দফা আন্দোলন (১৯৮৬), সাম্রাজ্যবাদের নীল নকশা ও কমিউনিস্টদের কর্তব্য ইত্যাদি।

তিনি এসব প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, সামাজিক সুবিচার, ন্যায় বিচার সমাজ থেকে উধাও হয়ে ক্ষমতাবানদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বিধি নিষেধের যূপকাষ্ঠে বলী হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। জনগণ গণতন্ত্রের মুখোশ দেখেছে, কিন্তু গণতন্ত্রের চেহারা দেখেনি। মেহনতি মানুষকে বাঁচার লড়াইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংঘটিত করতে বিপ্লবী দলের আদর্শ প্রচার করতে হবে। তাদেরকে গণতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রামেও নামতে হবে। কেননা ভাত ও ভোটের লড়াই একে অপরের সহায়ক। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন স্বাধীনভাবে ভোটাধিকারের সুযোগ থাকতে হবে। বুর্জোয়া শাসন দীর্ঘস্থায়ী হলে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়। তিনি তার মতাদর্শ পত্রিকায় লেখনীর মাধ্যমে কমিউনিস্ট আন্দোলনের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। শ্রেণিহীন শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থার জন্য প্রতিষ্ঠায় সিপিবিই সঠিক পথের নির্দেশনা দিচ্ছে বলে তিনি প্রচার করতেন।

প্রবন্ধ-নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, পুঁজিপতিদের শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন প্রক্রিয়াই বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকট নিরসন হতে পারে। তার লেখনীতে সিপিবি’র শ্লোগান মানুষের কাছে তুলে ধরেন, “জাল যার, জলাশয় তার, লাঙ্গল যার জমি তার”। ভাত-কাপড়, জমি কাজ কমিউনিস্ট পার্টির দাবি আজ। পাড়ায়, মহল্লায় শ্রমিক শ্রেণিকে বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাল পতাকার মিছিলে সমবেত হওয়ার আহবান জানাতেন। তার বিশ্বাস কৃষক রাজ, শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠা হবেই। সেদিনই শোষনমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

খুলনা গেজেট / আ হ আ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!