শ্রীলঙ্কায় চলমান সংকটের মধ্যে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিক এবং তাদের পরিবার ভারতে পালিয়ে গেছে। কলম্বোতে ভারতের হাইকমিশন সাম্প্রতিক সময়ের এই দাবিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম সিলন টুডের প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার দেয়া এক টুইট বার্তায় এই দাবিকে ‘ভুয়া এবং ডাহা মিথ্যা, সম্পূর্ণভাবে সত্য বিবর্জিত তথ্য’ হিসেবে মন্তব্য করেছে হাইকমিশন।
টু্ইট বার্তায় বলা হয়, ‘নয়াদিল্লির হাইকমিশন লক্ষ্য করেছে সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু অংশে গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে শ্রীলঙ্কার কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার ভারতে পালিয়ে গেছে।
‘এগুলো বানোয়াট এবং সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা প্রতিবেদন ও সত্য বিবর্জিত। হাইকমিশন দৃঢ়ভাবে এসব অস্বীকার করছে।’ তবে কোন কোন রাজনীতিক ও তাদের পরিবার ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বলে গুজব ওঠেছে তাদের নাম এড়িয়ে গেছে হাইকমিশন।
আন্দোলনের মুখে সোমবার পদত্যাগ করা দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি নৌ ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন।
এদিকে, সোমবার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকসহ নানা সংকটে নিমজ্জিত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার পাশে থাকার অঙ্গীকার করে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতাধর দেশ ভারত।
জ্বালানি, খাদ্যদ্রব্যসহ নানা সংকটে শ্রীলঙ্কায় অস্থিরতা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। আন্দোলনের মুখে সোমবার পদত্যাগ করেন দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। এর পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে সহিংসতার ঘটনা।
শ্রীলঙ্কার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের কুরুনেগালা শহরে দেশটির সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়ি ‘মেদামুলানা ওয়ালাওয়াতে’ সোমবার আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
সেদিনই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ত্রিনকোমালির একটি নৌ ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যরা। হেলিকপ্টারে করে সেখানে পালিয়েছেন তারা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই যে কাউকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাদের। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভকারীরা সরকারি সম্পদ বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে দেখামাত্র গুলি করারও নির্দেশ পেয়েছে তারা।
সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার ভাই ও দেশটির প্রেসিডেন্টের দেয়া বিশেষ ক্ষমতা ইতোমধ্যে প্রয়োগ শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের গুলিতে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার পাশে থাকার কথা জানায় ভারত।
মঙ্গলবার নয়াদিল্লি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে পাশে থাকবে ভারত।
শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় ভারতের সহায়তার কথাও উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার জনগণকে চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে ভারত এই বছরই ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা বাড়িয়েছে।’
এদিকে, চীনের বন্ধু হিসেবে পরিচিত মাহিন্দা রাজাপাকসের বিদায়ের ঘটনাকে শ্রীলঙ্কায় ভারতের কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখছেন অনেক বিশ্লেষক।
দেশটিতে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের খবর কয়েক মাস ধরে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। পাশাপাশি মাহিন্দাবিরোধী বিক্ষোভও প্রধান শিরোনাম হয়েছে এসব সংবাদমাধ্যমে।
মাহিন্দা রাজাপাকসের পতনের ঘটনায় ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব অনেকটাই খর্ব হবে বলে মনে করছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।