শ্রমিক ও বহিরাগতদের বিক্ষোভে সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চল গতকাল বুধবারও অশান্ত ছিল। বিক্ষোভ ও হামলার কারণে ১৬৭টি তৈরি পোশাক কারখানায় গতকাল ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে ওষুধ খাতেও অস্থিরতা চলছে। তাতে অন্তত ২৫টি বড় ওষুধ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ আছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুইশ শিল্প কারখানায় বন্ধ আছে উৎপাদন।
শিল্পাঞ্চলের অস্থিরতা নিরসনে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা জরুরি বৈঠকে বসেন। পরে শ্রম ও কর্ম সংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে আজকে (গতকাল) থেকে অ্যাকশন শুরু হবে। যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সেটার ভিত্তিতে তাদের (ইন্ধনদাতাদের) গ্রেপ্তার করা হবে। সেখানে যে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, সেটার জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’
আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বহিরাগতদের উসকানি রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সহায়তার আশ্বাস পাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ছুটি হওয়া সব পোশাক কারখানা চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে গতকাল বিকেলে আশুলিয়ার কারখানা মালিক, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এই কথা জানান তিনি।
মালিকদের সঙ্গে বৈঠক বিজিএমইএর নেতাদের
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আশুলিয়ার পোশাকশিল্পের মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিজিএমইএর নেতারা। গতকাল বিকেলে বিজিএমইএ কার্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে বিজিএমইএর কয়েকজন সভাপতি ছাড়াও সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহায়তা দেবে। বিশৃঙ্খলা হবে না-এমন আশ্বাস পাওয়ার পর আমরা কারখানা খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশ নিজেদের মতো করে পরিকল্পনা করছে।’ তিনি জানান, বিক্ষোভের কারণে গতকাল ১৬৭ কারখানা ছুটি হয়ে গেছে। কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, বিক্ষোভ শুধু তৈরি পোশাক নয়, অন্যান্য শিল্পেও দেখা যাচ্ছে। শিল্প পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরোপুরি কার্যকর নয়। এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে সবাই। তিনি আরও বলেন, কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ করছেন। ৫০-৬০ জন বহিরাগত লোক এসে হামলা করে গেট ভেঙে দিচ্ছে। এই গ্রুপে কিশোর গ্যাং, টোকাইসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ আছে। অনেক কারখানায় স্বেচ্ছাসেবীরাও নিরাপত্তার কাজ করছেন। আজ (গতকাল) রাত থেকে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে।