পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর পূর্তিতে আজ বৃহস্পতিবার শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় স্মরণ করা হচ্ছে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের। সকাল নয়টার দিকে রাজধানীর বনানীতে সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর সামরিক সচিব। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
এরপর তিন বাহিনীর প্রধান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা জানান নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনেরা। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত কর্নেল কুদরত এলাহি রহমান শফিকের ছেলে সাকিব রহমান বলেন, এই হত্যার বিচার চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। কিন্তু হত্যার পেছনের ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো বিচারের বাইরে রয়েছে। পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের বের করতে বিচারিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি।
নিহত লে. কর্নেল লুৎফর রহমানের ভাই আখলাকুর রহমান ও এহতেশাম রহমান বলেন, তাঁরা চান, এই দিনকে রাষ্ট্রীয় শোক ও ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হোক। তাহলে আগামী প্রজন্ম এই দিন সম্পর্কে জানতে পারবে।
মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের ভায়রা আসলাম সেরনিয়াবাত বলেন, রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। তাহলেই নিহত সেনা কর্মকর্তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিএনপির নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১২ বছর পরও এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের চূড়ান্ত ফয়সালা এখনো হয়নি। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার দাবি করেন তিনি।
আজ থেকে এক যুগ আগে, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বর্তমান নাম বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ করেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সদস্য। তাঁরা পিলখানায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালান। নিষ্ঠুর আচরণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন সামরিক কর্মকর্তাদের অনেকের পরিবারের সদস্যরাও। দুদিনব্যাপী ওই বিদ্রোহ শেষে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মামলাটি এখন আইনি লড়াইয়ে চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। তবে এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতের গণ্ডি পেরোয়নি।
হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০৪ জন আসামি পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন। খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ আসামির ক্ষেত্রে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এখন এসব আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায়। দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটি সবচেয়ে বড় মামলা।
খুলনা গেজেট/এনএম