সাতক্ষীরায় জমি দখলের উদ্দেশ্যে শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট অন্তাখালী গ্রামের আদিবাসী মুন্ডা পল্লীতে সন্ত্রাসী হামলায় আহত নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা মারা গেছে। শনিবার (২০ আগস্ট) বেলা পৌনে ৪টার দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে হামলার ঘটনায় ২২ জন এজাহার নামীয় ও ১৬০-১৭০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মুন্ডা পল্লীর ফনিন্দ্র নাথ মুন্ডা।
নিহত নরেন্দ্র নাথ মুন্ডা (৭০) সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট অন্তাখালী গ্রামের মুল্লক চাঁদ মুন্ডার ছেলে।
শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সানোয়ার হোসেন বলেন, মুন্ডা পল্লীতে হামলার ঘটনায় শুক্রবার রাতেই মামলা রেকর্ড হয়েছে। মামলা নং-৩৮। এ মামলায় শ্রীফলকাটি গ্রামের আলমগীর গাজীর ছেলে নূর হোসেন ও বংশীপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদ নামের দুইজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জমি দখলের উদ্দেশ্যে শ্রীফলকাটি গ্রামের আবদুল গফুর সরদারের ছেলে রাশিদুল ইসলাম ও এবাদুল হোসেনের নেতৃত্বে দুই শতাধিক লাঠিয়াল শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট অন্তাখালী গ্রামের মুন্ডা পল্লীর আদিবাসী মুন্ডাদের উপর বর্বোরচিত হামলা চালায়।
বিরোধপূর্ণ ৮ বিঘা জমি দখলে নিতে পূর্বপরিকল্পিত এই তান্ডব চালানোর জন্য বংশীপুর, ঈশ্বরীপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন অংশ হতে লাঠিয়ালদের ভাড়া করে আনেন সংশ্লিষ্টরা। এসময় হামলার সাথে জড়িতরা আদিবাসী মুন্ডাদের পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রেখে তাদের ভোগ দখলে থাকা জমি চাষ করে সীমানা পিলার স্থাপন করে। এক পর্যায়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে ককেজন পালিয়ে গিয়ে জমি দখলে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে মুন্ডা সম্প্রদায়ের লোকজনকে বেপরোয়া লাঠিপেটা করে ভাড়াটিয়া লাঠিয়ালরা।
এতে আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের বিলাসী মুন্ডা, রিনা মুন্ডা, সুলতা মুন্ডা ও নরেন্দ্র নাথ মুন্ডা মারাত্মক আহত হন। এসময় হামলার শিকার পরিবারগুলো ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সাহায্য চাইলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে নরেন্দ্রনাথ মন্ডাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বেলা ৩ টা ৪০ মিনিটের দিকে নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা মারা যায়।
হামলার শিকার ফনিন্দ্র নাথ মুন্ডা জানান, তাদের দীর্ঘদিনের ভোগদখলীয় জমি দখলের জন্য গত কয়েক বছর ধরে প্রভাবশালী আব্দুল গফুর সরদারের ছেলে রাশিদুল ও এবাদুল ওই জমির মালিকানা দাবি করে তা দখলের হুমকি দিয়ে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আদালত একটি মামলা বিচারাধীন থাকার পরও শুক্রবার শত শত লাঠিয়াল নিয়ে তা দখল করে নিয়েছে।
সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার (সামস) নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণপদ মুন্ডা বলেন, শুক্রবার সকালে আদিবাসী মুন্ডাদের উপর নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মুন্ডা সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন ও ভোগদখলে থাকা জমি দখল করে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এঘটনার হামলার শিকার নরেন্দ্র নাথ মুন্ডা মারা গেছেন। তিনি এই হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোর্শেদ জানান, ধুমঘাট অন্তাখালী গ্রামে আদিবাসি মুন্ডা সম্প্রদায়ের সাড়ে ২৭ বিঘা জমির দখল নিতে শুক্রবার হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে শ্রীফলকাটি গ্রামের এবাদুল ইসলামের নেতৃত্বে দুই শতাধিক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। দখল পেতে বাঁধা দেওয়ায় মুন্ডাদের পিটিয়ে জখম করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রিনা মুন্ডা (৩৫), সুলতা মুন্ডা (৪০), বিলাশী মুন্ডা (৩৬) ও নরেন্দ্রনাথ মুন্ডাকে (৭০)। চিকিৎসাধীন অবস্থায় নরেন্দ্র নাথ মুন্ডা শনিবার বিকালে মারা গেছেন।
তিনি আরো বলেন, এঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যহত রেখেছে।
খুলনা গেজেট/এইচআরডি