সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কলবাড়ী বাজারের সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসানোর কাজ করা হচ্ছে। চিংড়ি ঘেরে নদীর পানি উঠানোর জন্য পাউবো বিভাগ-১ এর আওতাধীন ৫নং পোল্ডারে বাঁধের ভাঙ্গন পয়েন্টে এই পাইপ বসানো হচ্ছে। বিষয়টি শ্যামনগর উপজেলার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহনাজ পারভীনকে অবহিত করার পরেও এখনো পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে নদীতে জোয়ার বৃদ্ধি পেলে ওই স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে।
ঘূর্নিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের অধিকাংশ সংষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী শ্যামনগরে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শনকালে পাউবো’র বেড়িবাঁধে সব ধরনের পাইপ তোলার নির্দেশ দেন। কিন্তু শ্যামনগরের একটি স্বার্থন্বেষী মহল মন্ত্রীর সে নির্দেশ অমান্য করে দালাল চক্রের মাধ্যমে বহাল তবিয়াতে অবৈধভাবে পাইপ বসানোর কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে ফের হুমকির মুখে পড়ছে পাউবো’র বেড়িবাঁধ।
ভাঙ্গন কবলিত স্থানে অবৈধভাবে পাইপ বসানোর সাথে যুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, পাউবো’র সকল কর্মকর্তাকে অবহিত করেই রাস্তা কেটে পাইপ বসানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, নদীতে অস্বাভাবিকভাবে জোয়ার বৃদ্ধির কারণে গত ৩১ মার্চ বুড়িগোয়ালীনির দুর্গাবাটি গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ওই এলাকা প্লাবিত হয়। নষ্ট হয়ে যায় কোটি টাকার সম্পদ। এসব ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংষ্কারে হিমশিম খাচ্ছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। সামনে আসছে প্রবল জোয়ার। তার আগেই যদি এভাবে রাস্তা কেটে পাইপ বসিয়ে ঘেরে লোনা পানি তোলা হয় তাহলে বাঁধ আবারও ভেঙ্গে বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দুর্গাবাটিসহ কয়েকটি গ্রাম ফের প্লাবিত হয়ে নষ্ট হবে কাঁকড়ার প্রজেক্ট, মিষ্টি পানির উৎস, মৎস্য সম্পদসহ ঘর বাড়ি।
স্থানীয় গ্রামবাসী রুস্তুম আলী বলেন, কলবাড়ী বাজারের সামনে এ জায়গাটি ভাঙ্গন কবলিত। পাউবো’র রাস্তা কেটে যেভাবে পানি বসিয়ে লোনা পানি উঠানো হচ্ছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেড়িবাঁধ। চলতি শুষ্ক মৌসুমে নদীতে ফের বড় ধরনের কোন জোয়ার আসলে আবার ওই বাঁধ ভেঙ্গে যাবে। দ্রুত যদি এসব অবৈধ পাইপ না তুলে নেওয়া হয় তাহলে বাঁধ ভেঙ্গে যাবে।
স্থানীয় রবীন্দ্র নাথ মুল্লিক বলেন, ওয়াপদার (পাউবো) রাস্তা কেটে বসানো পাইপ দূরে না দেওয়ার কারণে প্রতিবছর বাঁধ ভাঙ্গে। রাস্তা কেটে যেভাবে পাইপ বসাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নদীতে জোয়ার এলে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাবে। তিনি দ্রুত এই অবৈধ পাইপ অপসারণের দাবি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহনাজ পারভীন বলেন, আমি পাইপ বসানো বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আরো অনেকের অনুরোধের কারণে এলাকাবাসীর চিংড়ি চাষের স্বার্থে সুযোগটা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাঁধ ভাঙ্গনের আশঙ্কা থাকলে পাইপ ক্লোজ করে দিব।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের জানান, মাছ চাষের জন্য বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পাইপ বসিয়ে নদীর পানি উঠানোর কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি এ কাজ করে থাকে তাহলে তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম