বাংলাদেশের উপকূলী জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের কর্ম প্রতিরোধ ও নির্মূলকরণে কাজ করে চলেছে বে-সরকারী সংস্থা উত্তরণ। দাতা সংস্থা এডুকো-(ঊফঁপড়) এর সহযোগিতায় উত্তরণ শ্যামনগরের উপজেলার গাবুরা, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনি ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় ৫-১৭ বছর বয়সী চিংড়ি, কাঁকড়া ও মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুদের নিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
উত্তরণের শিশু শ্রম নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী ও গাবুরা ইউনিয়নের চার গ্রামে ৪ টি শিশুকেন্দ্র পরিচালনা হচ্ছে। এই চার টি ইউনিয়নের চারটি লার্নিং সেন্টারে ৩৫০ জন শ্রমজীবী শিশুকে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই শিশুরা নিয়মিত লার্নিং সেন্টারে এসে লেখাপড়া করছে এবং এরমধ্যে ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী ২৫ জন মেয়ে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল সুইং মেশিন ও টেইলরিং এবং ২৫ জন ছেলে ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের বিষয়ে তিন মাসের কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। দুই বছর মেয়াদী উক্ত প্রকল্প ২০২১ সালের ১ জানুয়ারী হতে শুরু হয়। প্রকল্পের কার্যক্রমসমূহ হলো শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রদান পূর্বক উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান ও শিশুদের মূল ধারার স্কুলে পাঠানো, ১৪ বছর বয়সের বেশী শিশুদের কারিগরি শিক্ষা প্রদান, চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ স্থাপনে সহযোগিতা প্রদান, চাকুরি মেলা করা, উপজেলা ও কমিউনিটি পর্যায়ে শিশু সুরক্ষা কমিটির সাথে মিটিং করা, জাতীয় পর্যায়ে শিশুশ্রম আইন ও নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়নে এ্যাডভোকেসী করা।
তিনি আরও বলেন, সংস্থার পক্ষ থেকে শ্যামনগরের ৪ ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডে একটি জরীপ পরিচালনা করে দেখা যায়, সেখানে দুই শতাধিক শিশু এখনও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের কাজ করে যাচ্ছে। যারা অত্র লার্নিং সেন্টারের বাইরে। এমন শত শত শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তাদেরকে বিপদজনক এসব কর্ম প্রতিরোধ ও নির্মূলকরণে সরকারের পাশাপাশি অন্যান্যদেরও এগিয়ে আসা উচিৎ।
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর কেন্দ্রের শিক্ষার্থী ফয়সাল শেখ, নয়ন মন্ডল, ফুলঝুরি, সীমা বারুইসহ কয়েকজন জানায়, শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে পড়তে তাদের ভালো লাগে। কারণ বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি তারা এখানে পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছে।
ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণার্থী জান্নাতুন নাইম, লুৎফর রহমান, সুইং মেশিন ও টেইলরিং প্রশিক্ষণার্থী লাবনী আক্তার, একাদশী সর্দার, তাসফিয়া খাতুন জানান, তারা এলাকায় মাছ ও কাঁকড়া ধরাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত ছিল। উত্তরণের এডুকো প্রকল্প তাদেরকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেয়ার পাশাপশি বিনা খরচে প্রশিক্ষণ ও চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি করবেন। চাকুরী না হলেও প্রশিক্ষণ শেষে নিজেদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিজেরাই করতে পারবেন বলে জানান তারা।
শ্যামনগর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সোহাগ হোসেন জানান, মূলত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত স্কুল বহির্ভূত শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা। এটি দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া উপকূলীয় এলাকায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের এই কার্যক্রম উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়া”েছ। স্কুলটি যাতে স্থায়ীরূপ পায় সেজন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম. আবুজর গিফারী বলেন, শিশু শ্রম নিরসনে এসকল কার্যক্রমে এলাকার শ্রমজীবী ছেলে-মেয়েরা উপকৃত হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এএ