সাতক্ষীরার শ্যামনগরের আদিবাসী মুন্ডা পল্লীতে নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার (১৯ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্যামনগর উপজেলার মুন্ডা পল্লীতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের বিলাসী মুন্ডা, রীনা মুন্ডা, সুলতা মুন্ডা ও কার্তিক মুন্ডা নামের চারজন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে বেলা ১২টার দিকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় মুন্ডা সম্প্রদায়ের মানুষের জমি দখলের লক্ষ্যে রাশিদুল সরদার ও এবাদুল সরদারের নেতৃত্বে উপজেলার বংশিপুর থেকে আসা দুই শতাধিক ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল বাহিনী সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আদিবাসী মুন্ডা পল্লীতে হামলা চালায়। হামলার সাথে জড়িতরা সরকারদলীয় ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
হামলার সাথে জড়িত দুই শতাধিক লাঠিয়াল মুন্ডা পল্লীতে বসবাসরত পরিবারগুলোকে অবরুদ্ধ করে রেখে বিরোধপূর্ণ ৮ বিঘা জমি কলের লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা মুন্ডা সম্প্রদায়ের চাষের জমিতে বেড়ে উঠা ধান কলের লাঙ্গল দিয়ে নষ্ট করে দেয়। সন্ত্রাসী হামলায় আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের বিলাসী মুন্ডা, রীনা মুন্ডা, সুলতা মুন্ডা ও কার্তিক মুন্ডা নামের চারজন গুরুতর আহত হয়। ঘটনার সময় ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছানোর পর হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়।
হামলার শিকার ফণীন্দ্রনাথ মুন্ডা অভিযোগ করে বলেন, আকস্মিকভাবে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দুই থেকে আড়াই শ’ সন্ত্রাসী তাদের মুন্ডাপল্লী ঘিরে ফেলে। এসময় হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীরা প্রতিটি পরিবারকে ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রেখে তাদের ভোগ দখলে থাকা জমিতে কলের লাঙ্গল দিয়ে চাষ শুরু করে। এক পর্যায়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে কোন রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জমিতে চাষে বাধা দেয়ায় তাদেরকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় বিলাসী মুন্ডা, রীনা মুন্ডা, সুলতা মুন্ডাসহ কার্তিক মুন্ডা নামের একজন মারাত্মকভাবে আহত হন। পরবর্তীতে ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশকে ঘটনা জানানোর দীর্ঘ সময় পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছালে হামলার সাথে জড়িতরা জমি চাষ শেষে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। এসময় মুন্ডা সম্প্রদায়ের জমিতে তৈরী করা ধানের বীজতলা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়।
সুন্দরবন আদিবাসী মহিলা সংস্থা সামস’র নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণপদ মুন্ডা বলেন, সন্ত্রাসীদের নারকীয় তান্ডবের শিকার তিন নারীসহ একজন পুরুষকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মুন্ডা সম্প্রদায়ের জমি হস্তান্তরে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ স্থানীয় কিছু ব্যক্তি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে উক্ত জমির মালিকানা দাবি করায় বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এমতাবস্থায় শুক্রবার সকালে ওই জমি দখল করতে গিয়ে মুন্ডা সম্প্রদায়ের তিন নারীসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা।
এ ব্যাপারে রাশিদুল ইসলাম জানান, তাদের জমি মুন্ডা সম্প্রদায়ের লোকজন অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল। শুক্রবার ওই জমি চাষ করতে গেলে তাদের জমিতে নামতে বাধা দেয়া হয়। কাউকে মারপিটের ঘটনা তিনি অস্বীকার করেন।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এইচআরডি