সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনাকালে বিরোধীদলীয় সদস্যরা সোমবার (৭ জুন) শেয়ারবাজার ও বিদেশে অর্থপাচারসহ অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে ছিলেন বেশ সোচ্চার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেয়ারবাজার একেবারে শুয়ে গেছে। দেশের ব্যাংকগুলো পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে বাংলাদেশের অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত। দুর্নীতির এই অবস্থা যদি কমাতে না পারেন তাহলে ভয়ানক অবস্থা হবে।
হারুনুর রশীদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অপ্রদর্শিত কালো টাকা যতক্ষণ পর্যন্ত থাকবে, ততক্ষণ প্রদর্শন করার সুযোগ দেব—এটা প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা দুর্নীতির বিরুদ্ধে (জিরো টলারেন্স) তার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। এ রকম চলতে পারে না।
বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ আর কালো টাকা এক নয়’—এ কথার সঙ্গে আমি একমত। অপ্রদর্শিত অর্থ, ঘরবাড়ি, জমি বিক্রি করা টাকা, যেগুলো বৈধ, সেগুলো বৈধ করার সুযোগ দিন। কিন্তু দুর্নীতির মাধ্যমে, মাদকের মাধ্যমে অবৈধ রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে যদি কেউ সম্পদ গড়ে তোলে, তাকে যদি সুযোগ দেন তাহলে যারা ন্যায়ের পথে চলছে, সৎ পথে চলছে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, যারা পুকুরচুরি করছে, তারা বেরিয়ে যাচ্ছে। আর যারা এসব প্রকাশ করছেন, তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কাজ করে। সাংবাদিকদের এইটুকু সুযোগ দেওয়া সমাজের দায়িত্ব।
জি এম কাদের বলেন, কিছুদিন আগে একজন সাংবাদিককে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। গলা টিপে ধরা হয়েছে। তাঁর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। গুজব ছড়াচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা হতে পারে। বিশাল শাস্তি হতে পারে।
সম্পূরক বাজেট প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, বাজেটের চেয়ে কম খরচ হওয়া যেমন অস্বাভাবিক, তেমনি বেশি খরচও অস্বাভাবিক। এই অস্বাভাবিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে তার কারণগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা দরকার। বৃদ্ধির প্রস্তাব এলে দেখতে হবে এখানে দুর্নীতি হয়েছে কি না, বা প্রাক্কলন যথাযথ হয়েছিল কি না। ভুলত্রুটি কার কারণে হয়েছে, সেটা জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। সম্পূরক বাজেট নিয়ে যে আলোচনা হয়, তা অনেকটা অর্থহীন আলোচনা। কেউ প্রাসঙ্গিক কথাও বলেন না। জবাবদিহি এখানে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। পরিকল্পিতভাবে খরচ কমানো হলে মিতব্যয়িতা বলা যাবে। কিন্তু খরচ করতে না পারা অদক্ষতা। যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিষয়ে দেখা উচিত।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে জি এম কাদের বলেন, এই বাজেটে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। করপোরেট কর কমানো হয়েছে। এতে ধনী আরও ধনী হবে, গরিব আরও গরিব হবে। ধনীদের তোষণের জন্য এই বাজেট অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে অনেকে মনে করছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই বাজেটকে বলা যায়, বাজেট অব দ্য বিজনেসম্যান, বাই দ্য বিজনেসম্যান, ফর দ্য বিজনেজম্যান। তারা বড় ব্যবসায়ীদের বুঝিয়েছেন। মাঝারি ও নিচু স্তরের ব্যবসায়ীকে বোঝাননি।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতা আরেক নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি একজন সজ্জন ব্যক্তি। আপনার বাবা আমার সঙ্গে মন্ত্রী ছিলেন। আপনাকে আমি চিনি। অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে আপনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যা হচ্ছে তাতে আপনার তো কর্তৃত্ব নেই।’
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির এ নেতা আরও বলেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন নেই। এখন সবচেয়ে বেশি দরকার অক্সিজেন। সেটা না এনে এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিন এনে উপজেলায় পাঠানো হচ্ছে। তারা সব সাজিয়ে রেখে দিয়েছে। চালাতে পারে না। লক্ষ কোটি টাকা যাচ্ছে। কিন্তু জনগণ সেবা পাচ্ছে না।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, চুরি-ডাকাতি করলে একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা যায়। সাংবাদিককে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হলো। তাঁকে টয়লেটে যেতে দেননি। অসুস্থ মানুষ, তাও মহিলা। তাঁকে এভাবে হেনস্তা করা যায়? এটা নিয়ে জাতিসংঘ, সারা পৃথিবী কথা বলল। আমাদের মুখটা কোথায় গেল? নিজেদের দুর্বলতা নিজেদের ঢাকতে হয়।
অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, পিকে হালদার এত টাকা নিল। নয় মিনিটের জন্য পিকে হালদারকে ধরতে পারেনি। তাহলে নয় ঘণ্টা আগে ধরতে পারলেন না কেন? এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংকের টাকা নিচ্ছেন। টাকা নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ পাঠাচ্ছেন। দুদকের একটি করে অফিস কানাডায়, মালয়েশিয়ায়, অস্ট্রেলিয়ায় করুন। তাহলে দেখা যাবে কে কত টাকা নিয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই