এক ধাক্কায় অর্ধেকে নেমে এসেছে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর আসন। এবার তাদের দেয়া হয়েছে ৭টি। কিন্তু এতে নাখোশ তারা। সেই সঙ্গে শরিকদের চিন্তা বাড়িয়েছে ১৪ দলীয় জোটের আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাই আসন সংখ্যা বাড়ানো ও স্বতন্ত্র প্রত্যাহার ইস্যুতে চলছে শেষ মুহূর্তের দর কষাকষি।
মাঠের রাজনীতি কিংবা জনসমর্থনের প্রশ্নে ছোট দল হলেও মামলার রাজনীতিতে ঝানু খেলোয়াড় তরিকত ফেডারেশন। দলটির চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। ১৪ দলের শরীক হিসেবে নৌকা প্রতীকে চট্টগ্রাম-২ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন টানা দু’বার। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ তাকে আসন না দেয়ায় নাখোশ তিনি।
চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, আমাদের মামলায় জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। আমাদের মামলাতেই নিজামী-মুজাহিদ গ্রেপ্তার হয়েছে। ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা গেছে। আমরা এমন একটি দল, যাদের জন্য আওয়ামী লীগ ও সরকার উপকৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, এবার আমাকে আসন দেয়া হয়নি। তাতে আমি নাখোশ। কারণ, চারবারের এমপি আমি। তবে কোন বিবেচনায় দেয়া হয়নি, সেটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। কিন্তু সামনে সময় আছে। আশা করি, বিষয়টি জানতে পারব।
আগেরবার জাতীয় নির্বাচনে শরিক দলগুলোর জন্য ১৬টি আসন ছাড়লেও এবার দিয়েছে ৭টি। এর মধ্যে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্ট ৩টি করে। আর জেপি পেয়েছে ১টি। এই আসন বণ্টন নিয়ে সন্তুষ্ট নয় শরিক দলগুলো।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন,চাওয়ার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লাগছে। তাই আমরা আসন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছি। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে জানানো হয়েছে। দলটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছি আমরা।
শরিক দলগুলোর প্রার্থীরা এবারও নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন বটে। কিন্তু এবার তাদের ভোগাচ্ছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ইস্যু। কেননা, শেষ পর্যন্ত হেভিওয়েট স্বতন্ত্ররা মাঠ না ছাড়লে শরিকদের জন্য জয় তুলে আনা ততটা সহজ হবে না।
হাসানুল হক ইনু বলেন,আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নিতে আওয়ামী লীগকে অনুরোধ করেছি। কারণ আমরা চাই না জোটের মধ্যে একটি আওয়ামী-জাসদ সংঘর্ষ হোক। এছাড়া সাংঘর্ষিক কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক।
১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে আগের নির্বাচনে আসন পেলেও এবার যারা পাননি, তাদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়াবার কথা ভাবছেন ভেতরে ভেতরে। তবে তারা শেষ সিদ্ধান্তের জন্য তাকিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিকে।
অপরদিকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে মোটামুটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে আওয়ামী লীগ। তবে দীর্ঘ দিনের মিত্র জাতীয় পার্টির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরও আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। ফলে রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন সামনে রেখে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দুই দফা বৈঠকে বসেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রথম বৈঠকটি হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়, যা চলে দেড় ঘণ্টার মতো। দ্বিতীয় বৈঠকটি শুরু হয় রাত পৌনে ৯টায়, আর শেষ হেয় রাতে সাড়ে ১০টায়। তবে বৈঠকের বিষয়ে কোনও নেতেই কথা বলতে রাজি হননি।
জানা গেছে, দফতর সম্পাদকের কক্ষে অনুষ্ঠিত দুটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকই নেতৃত্বে দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রথম বৈঠকে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম অংশ নেন। দ্বিতীয় বৈঠকে ওবায়দুল কাদের, সালমান এফ রহমান, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজমের সঙ্গে যুক্ত হন দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত ও উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান।
দলীয় সূত্র জানায়, উভয় বৈঠকেই আলোচনার মূল বিষয় ছিল শরিক ও মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা। এর আগে ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে ৭টি আসনে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। তা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেওয়ার মধ্যেই জতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে এ পর্যন্ত পাঁচ দফা বৈঠক হয়েছে। জাতীয় পার্টি ৪০টি আসনে ছাড় চাইলেও ২৬টির বেশি দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে বনানীর একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে সবশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম অংশ নেন। তাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন।
গত ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। পরদিন ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আবারও গণভবনে যান জি এম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ছয় জন কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ওই দিন আওয়ামী লীগের এক নেতার গুলশানের বাসায় দলটির হাফ ডজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির দুই নেতা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলটির নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতাদের এসব বৈঠক নিয়েও সরাসরি কিছু জানায়নি দল দুটি।
খুলনা গেজেট/কেডি