বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার কারণে ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে তিন দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার খুলেছে শেয়ারবাজার। লেনদেনের প্রথম দিনে বড় দর পতন হয়েছে। দর হারিয়েছে ৮৯ শতাংশ শেয়ার। এতে প্রধান মূল্যসূচকের যে পতন হয়েছে, তা প্রায় ২২ মাসের সর্বোচ্চ। লেনদেনও কমে প্রায় ১৯ মাসের সর্বনিম্নে নেমেছে।
দর পতনের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, লেনদেন চালু হলেও দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট ছিল না। আবার কারফিউ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিথিল করা হলেও রাস্তার পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকে ব্রোকার হাউসে যাননি। ফলে শেয়ারদরের হালনাগাদ তথ্য দেখতে পারেননি অনেকে। ফলে নতুন করে শেয়ার কেনা বা বেচার সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এর বাইরে সাম্প্রতিক সংঘাত-সহিংসতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা থেকে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে সতর্ক ছিলেন বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, লেনদেন চিত্র দেখেই বোঝা যায় কেনার চাহিদা কম ছিল। বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করছেন।
ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্ত্বিক আহমেদ জানান, কারফিউ শিথিল হওয়া ও ব্যাংক লেনদেন চালু থাকার সঙ্গে সমন্বয় করে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লেনদেন সময় নির্ধারণ হয়। লেনদেন শুরুর আধাঘণ্টা আগেই ২৫০ ব্রোকার ডিএসইর সার্ভারে সংযুক্ত হয়েছিল। পরে আরও ৪১টি সংযুক্ত হয়। ডিএসইর ফ্লেক্সট্রেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে শেয়ার কেনাবেচার আদেশ সরবরাহ করে, এমন ৩ হাজার ৮৪১টি ট্রেড ওয়ার্ক স্টেশন টিডব্লিউএস (শেয়ার কেনাবেচার সফটওয়্যারযুক্ত কম্পিউটার) সংযুক্ত ছিল। এর বাইরে বড় যেসব ব্রোকারেজ হাউস নিজস্ব এপিআই দিয়ে অর্ডার সরবরাহ করে, তাদের আরও ৫০০ থেকে ৬০০টি টিডব্লিওএস সংযুক্ত হয়ে থাকতে পারে।
সাত্ত্বিক আহমেদ বলেন, প্রায় সব স্টেকহোল্ডার লগইন করেছে। ইন্টারনেট সমস্যার কারণে শুধু ইনোভা সিকিউরিটিজ একটি টিডব্লিউএস নিয়ে সংযুক্ত হতে পেরেছিল।
প্রায় সব ব্রোকারেজ হাউস লেনদেনে অংশ নেওয়ার পরও ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া শেয়ারের মূল্য ছিল মাত্র ১৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যা ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি বা প্রায় ১৯ মাসের সর্বনিম্ন। ওই দিন ১৪৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল। চট্টগ্রামের শেয়ারবাজার সিএসইতে গতকাল মাত্র আড়াই কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
লেনদেন এত কমার কারণ জানতে চাইলে ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রথমত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সর্বত্র সক্রিয় ছিল না। আবার সর্বত্র ইন্টারনেটের গতি ভালো ছিল না। এতে লেনদেন অর্ডার দেওয়ার পর তা কার্যকর হলো কিনা, বোঝা যাচ্ছিল না। এ বিভ্রান্তির কারণে অনেকে কেনাবেচা থেকে বিরত ছিলেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, গতকাল অধিকাংশ বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলতে চেয়েছিলেন। শেয়ার কেনাবেচার মধ্যে বিক্রির আদেশই ছিল বেশি। সেই তুলনায় ক্রেতা ছিল সামান্য। শেয়ারদরে নিচের সার্কিট ব্রেকারের হার মাত্র ৩ শতাংশ হওয়ায় বিক্রির চাপে অধিকাংশ শেয়ারই ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, অনেকে ‘প্যানিক সেল’ করেছে। এতে দর পতনও মাত্রা ছাড়ায়।
গতকাল তালিকাভুক্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে কম-বেশি ৩৮৯টির কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২০টির দর বেড়েছে, কমেছে ৩৫৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির দর। লেনদেনের মাঝে ৩০৪টি সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা বা ক্রেতাশূন্য হয়েছিল। অবশ্য লেনদেনের শেষেও এ সংখ্যা ছিল ২২৬টি। এতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯৫ পয়েন্ট হারিয়ে ৫৩৫০ পয়েন্টে নেমেছে। সূচক পতনের হার পৌনে ২ শতাংশ।
সূচকের পতন ২০২২ সালের ৬ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। ওই দিন এ সূচকের পতন হয়েছিল ১১৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ ছাড়া পয়েন্ট বিবেচনায় গতকালের সূচকের পতন চলতি বছরের ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। গতকাল লেনদেনের মাঝে সূচকটি ১০৮ পয়েন্ট হারিয়ে ৫৩৩৮ পয়েন্ট পর্যন্ত নেমেছিল।
খুলনা গেজেট/এইচ