শেখ হাসিনার রাজনৈতিকভাবে মৃত্যু ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘আমি বলব নিঃসন্দেহে তিনি রাজনৈতিক আত্মহত্যা করেছেন। তিনি দুরাত্মা-দুরাচারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। তাকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।’
আয়নাঘর, গুমঘর, ক্রসফায়ার, হামলা-মামলা দিয়ে শেখ হাসিনা প্রতিদ্বন্দ্বীকে অস্থির করে রেখেছিলেন মন্তব্য করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ চালিয়েছেন তার পরিণতি এরকমই হবে। তার দেশত্যাগ স্বাভাবিক ছিল। এরশাদকে বিতাড়িত হতে হলেও দেশত্যাগ করতে হয়নি। কিন্তু শেখ হাসিনাকে প্রাণ বাঁচাতে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। প্রাণরক্ষা হবে না জেনেই তিনি পালিয়ে গেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুত সময়ে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারলে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নম্বর সম্মানীয় ব্যক্তি হিসেবে সবার মনের মণিকোঠায় স্থান পাবেন বলেও মনে করেন লতিফ সিদ্দিকী।
জাতীয় দৈনিক আমার দেশ-এর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন নির্বাচিতদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ৫ আগস্ট ছিল অভূতপূর্ব। শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ চালিয়েছেন, তার পরিণতি তো এরকমই হবে। আয়নাঘর, গুমঘর, ক্রসফায়ার; প্রতিদ্বন্দ্বীকে হামলা-মামলায় অস্থির করে রাখা- এসবই তার সময়ে হয়েছে। আমি ভীষণভাবে অস্থির ও মর্মাহত আমার দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। যে রাষ্ট্র বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করতে পারে না, যে রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন সরকারপ্রধানের সহযোগিতা ও অনুমোদন ছাড়া কি লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে? শেখ হাসিনার ভাগ্য ও পরিণতি আল্লাহ নির্ধারণ করবে। আর আপনি প্রতিপক্ষকে যত বেশি আঘাত করবেন, তার মধ্যে তত বেশি প্রতিশোধ স্পৃহা বাড়বে। তাই বলব তার দেশত্যাগটা ছিল স্বাভাবিক। এরশাদকে বিতাড়িত হতে হয়েছে, দেশত্যাগ করতে হয়নি। কিন্তু শেখ হাসিনাকে প্রাণরক্ষার্থে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। প্রাণরক্ষা হবে না দেখেই পালিয়ে গেছেন। তার কার্যক্রমই বলে দিয়েছে যে, তিনি গণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেননি।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমি নিঃসন্দেহে বলব শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে। তিনি রাজনৈতিক আত্মহত্যা করেছেন। রাজনৈতিকভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। আর এটা ৫ আগস্টই নয়, সেদিন থেকে তিনি দুরাত্মা-দুরাচারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়েছেন। প্রভুত্বকামী মানসিকতার দ্বারা যেদিন প্রাচীরবেষ্টিত হয়েছেন, সেদিনই তার রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে, সেদিনই তার জৈবিক পিতৃত্বের মৃত্যু ঘটেছে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঔরসজাত সন্তান থেকে ছিন্ন হয়ে গেছেন। আইনত যত অধিকার থাক, কিন্তু চৈতন্যিকভাবে তিনি অধিকার হারিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম